Thank you for trying Sticky AMP!!

বেকারত্ব বৃদ্ধি

বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে গত এক বছরে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ বেড়ে গেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এক বছরেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। আর শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব রয়েছে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে। প্রাথমিক শিক্ষা আছে এমন লোকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ, কিন্তু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন এমন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ যিনি যত বেশি শিক্ষা গ্রহণ করছেন, তাঁর বেকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

এমন নয় যে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। সর্বশেষ জনশক্তি জরিপের তথ্য অনুসারে গত অর্থবছরে ১৩ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ বেড়ে গেছে। যাঁদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিতদের সংখ্যাই বেশি। উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্ব ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এর অর্থ হচ্ছে আমাদের দেশে যে পরিমাণে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি হচ্ছে, তাকে কাজে লাগানোর উপযোগী পর্যাপ্ত ক্ষেত্র নেই।

আমাদের শ্রমবাজারের ৮৫ শতাংশ এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক—এই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই খাতে অল্প বয়সী ও নারীদের প্রাধান্য দেখা যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৯১ দশমিক ৪ শতাংশই ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী। নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক এগিয়ে: মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, আর নারীর ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখন বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। আগের অর্থবছরেও বেকারত্বের হার একই ছিল। অর্থাৎ বেকারত্বের হার অপরিবর্তিত থাকা সত্ত্বেও এক বছরে মোট বেকারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক নিয়মেই এটা ঘটা সম্ভব। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে বছরে বছরে মানুষ বাড়বে, বেকারের সংখ্যাও বাড়বে—এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

আমরা যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে চলেছি, তখন আমাদের সামনের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সেই সব চ্যালেঞ্জের অন্যতম। কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। সে জন্য বিনিয়োগের আরও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন, জ্বালানিসংকট দূর করা ও অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বিশেষত বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য এই দুটি ক্ষেত্রের উন্নতি সাধনের বিকল্প নেই।

রপ্তানি খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের রপ্তানিপণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই এখনো তৈরি পোশাক, কিন্তু রপ্তানি বহুমুখীকরণের বিপুল সুযোগ রয়েছে। যেমন পাটপণ্যের বিপুল সম্ভাবনার কথা বহুল প্রচারিত। কৃষি খাতের শিল্পায়নের মাধ্যমে আরও অনেক কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। শিল্প খাতে আরও অনেক রপ্তানিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগের সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন। পর্যটনশিল্প বিকাশের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়েও কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। এসব ক্ষেত্রেই দক্ষ ও শিক্ষিত শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। এভাবেই বেকার সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করতে হবে।