Thank you for trying Sticky AMP!!

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বিষবৃক্ষের ফল বিষাক্তই হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাজগতে এই বৃক্ষ অতি উচ্চফলনশীল, কারণ এখানে বহু বছর আগে গজিয়ে ওঠা বিষবৃক্ষ নির্মূল করার পরিবর্তে বরাবরই তাতে উন্নততর সেচ ও সার দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নতুন ফলন দেখা গেল। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের বিরুদ্ধে তাঁরই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা যেসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেছেন, তা ভয়াবহ এবং এসব অভিযোগের জবাবে উপাচার্য যা বলেছেন, তা যারপরনাই হতাশা প্রদায়ক। 

শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকেন। তিনি অবৈধভাবে দুটি অনুষদ—বিজনেস স্টাডিজ, সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন এবং এর পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে তিনি কোষাধ্যক্ষ এবং একটি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একাই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অর্ধশতাধিক কোর্স পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। অথচ কোনো কোর্সই না পড়িয়ে তিনি পারিতোষিক বাবদ লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। তিনি ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিসে বসে সিন্ডিকেট সভা, নিয়োগ বোর্ডসহ অনেক সভা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা যাতায়াত বাবদ ব্যয় হচ্ছে। তিনি নিজের মা নিলুফার বেগমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করেছেন, যদিও নিলুফার বেগম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো শিক্ষকতা করেননি। 

এই উপাচার্যের ক্রমিক অনুপস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু তিনি সেসব খবর কখনোই পাত্তা দেননি। দুটি অনুষদের ডিন এবং একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান থাকা প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেছেন, ‘এ বিষয়টা নতুন নয়, আমার আগের উপাচার্যও এটি করেছেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। এখানে আমার কিছু করার নেই। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদে আগের উপাচার্যের ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব পালন করেছি।’ তাঁর বক্তব্যেই দেখা যাচ্ছে, তিনি ‘উত্তরাধিকারসূত্রে’ এই অর্থকরী ও সুবিধাপ্রসূ গুচ্ছদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। একাই অর্ধশতাধিক কোর্স পড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এক দিনে তো পড়াইনি। আড়াই বছরে বিভিন্ন সময়ে পড়িয়েছি।’ কিন্তু আড়াই বছরে অর্ধশতাধিক কোর্স পড়াতে গেলে তাঁকে যত ঘণ্টা ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে তা যেকোনো মানুষের পক্ষে অসম্ভব। নিজের মাকে নিয়োগ বোর্ডে রাখা নিয়ে তিনি যে জবাব দিয়েছেন, তা এককথায় অগ্রহণযোগ্য। 

আত্মপক্ষ সমর্থনে একজন উপাচার্যের এ ধরনের যুক্তি উপস্থাপন নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। যে দৃঢ় আত্মমর্যাদাবোধ তাঁর কাছে প্রত্যাশিত, তাঁর আচরণে তার অভাব অতি প্রকট। নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি আইনের চেয়ে নৈতিকতার বিচারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের পদকে মর্যাদা দিলে এসব থেকে নিজেকে শত হাত দূরে রাখাই এ ধরনের পদাধিকারীদের স্বাভাবিক কর্তব্য। তিনি যখন সে কর্তব্য পালনে ব্যর্থ, তখন এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করা আচার্যের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।