Thank you for trying Sticky AMP!!

বেসরকারি খাতে যোগ্য কর্মী

চাকরির বাজারে বাংলাদেশে এক অদ্ভুত অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিবছর হাজার হাজার উচ্চশিক্ষিত তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করলেও তাঁরা পছন্দমতো কাজ পাচ্ছেন না। অনেকে বছরের পর বছর বেকার থাকছেন। অন্যদিকে শিল্পকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকেরা দেশে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী না পেয়ে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত শনিবার ব্র্যাক সেন্টারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ফ্রেডরিক এভার্ট স্টিফটাং (এফইএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে দক্ষতার ঘাটতি এবং যুব কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সংলাপে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও তরুণসমাজের প্রতিনিধিদের কণ্ঠে এই বাস্তবতাই উঠে এসেছে।

এক দশক আগেও উচ্চশিক্ষিত ও মেধাবী তরুণদের মধ্যে বেসরকারি তথা শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ ছিল। বর্তমানে তাঁরা সরকারি চাকরিতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এমনকি প্রকৌশলবিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের মতো বিশেষায়িত বিষয়ে যাঁরা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন, তাঁদেরও একাংশ সরকারি চাকরিতে ঝুঁকছেন। তাঁরা মনে করছেন, সরকারি চাকরিতে পেশাগত নিশ্চয়তার পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা ও প্রভাব বেশি।

অতীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তরুণদের আগ্রহের প্রধান কারণ ছিল সরকারি চাকরির চেয়ে সেখানে বেতন-ভাতা অনেক বেশি ছিল। ২০১৫ সালে প্রণীত নতুন বেতনকাঠামোয় সরকারি চাকরিতে বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হওয়ায় সেই ব্যবধান কমে গেছে। এ ছাড়া আমাদের তরুণদের মধ্যে যত উঁচু পদই হোক না কেন, কারখানায় কাজের চেয়ে দাপ্তরিক কাজে বেশি উৎসাহী। সেমিনারে একজন উদ্যোক্তা আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আইআইটি থেকে পাস করে ভারতের তরুণেরা গুগলের প্রধান নির্বাহী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর আমাদের তরুণেরা বুয়েট থেকে পাস করার পর তাঁদের লক্ষ্য হয় বিসিএস।’

তবে স্বীকার করতে হবে যে বেসরকারি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজে তরুণদের অনাগ্রহের একটি বড় কারণ চাকরির অনিশ্চয়তা। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় এবং মেয়াদ শেষ হলে সেই চুক্তি নবায়ন করে না। অনেক বেসরকারি ব্যাংক কর্মীদের মূলধন সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়, তা পূরণ করা অতি দক্ষ কর্মীর পক্ষেও সম্ভব হয় না। পণ্য বিক্রয়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের সময় এমন সব শর্ত জুড়ে দেয়, যা মেধাবী তরুণদের জন্য সম্মানজনক নয়।

অতএব, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মেধাবী তরুণদের আকৃষ্ট করতে চায়, তাদেরও মানসিকতার পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মীর দক্ষতা ও যোগ্যতা একমাত্র মাপকাঠি ধরতে হবে। অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণকালেই কাজের অভিজ্ঞতার সুযোগ দিয়ে থাকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। আমাদের এখানেও সেটি ব্যাপকভাবে চালু করতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দক্ষ ও যোগ্য কর্মী তৈরি করতে দেশে আরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় কেন দক্ষ ও যোগ্য কর্মী নিয়োগ করতে পারছে না, তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে। এটি কেবল ব্যক্তির নয়, জাতিরও বিরাট ক্ষতি। বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী বাইরে পড়াশোনা করছেন, তাঁরা সেখানে কর্মজীবনেও ভালো করছেন। আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসী ছেলেমেয়েদের কথাটিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে পারে। দেশে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী তৈরিতে শিক্ষার মান যেমন উন্নত করতে হবে, তেমনি তাঁদের বেসরকারি খাতে আকৃষ্ট করতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি চাকরিরও নিশ্চয়তা থাকতে হবে।