Thank you for trying Sticky AMP!!

বোরো ও রবিশস্যের বিপদ

সম্পাদকীয়

ডিজেলের দাম বাড়ায় জনজীবনে ইতিমধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে। তবে কৃষির ওপর এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া পড়বে বোরো ধান ও রবিশস্যের চাষাবাদ শুরু হলে। বোরো ধান ও রবিশস্য প্রায় পুরোটাই সেচনির্ভর। সারা দেশে প্রায় ১৬ লাখ ডিজেলচালিত ছোট সেচযন্ত্র (শ্যালো মেশিন) রয়েছে। জমি চাষ ছাড়াও পণ্য পরিবহন, নৌযান চালানোর মতো কাজে সারা বছর শ্যালো মেশিনের ব্যবহার হয়।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের জমিতে সেচ দেওয়া শুরু হবে। এ সেচ দেওয়ার যন্ত্রের প্রধান জ্বালানি ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ১৫ টাকা। এতে করে এবারের বোরো মৌসুমে কৃষকের সেচ বাবদ বাড়তি খরচ হবে ৭৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সার ও কীটনাশকের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ বছরে বাড়ছে এক থেকে দুই টাকা করে। গত মৌসুমে বোরো ধানের কেজিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ১ হাজার ৮০ টাকা। এবার সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাপ আরও বাড়বে।

ভারতে কৃষকেরা কৃষিপণ্যের ন্যায্য দামের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকেরা সংগঠিত নন; তাঁদের পক্ষে কথা বলারও কেউ নেই। অসহায় কৃষক হয় মুখ বুজে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন, অন্যথায় সেচের ব্যবহার কমিয়ে দেবেন। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। আর সেচে ডিজেল কম ব্যবহার করলেও জমিতে শস্য উৎপন্নও কমে যাবে। এই দ্বিমুখী বিপদ থেকে কৃষককে রক্ষার একটা উপায় হলো কৃষককে ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়া। অন্যথায় কৃষিতে আমরা যে ধারাবাহিক উন্নতি করে এসেছি, তা হোঁচট খাবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই করোনাকালেও যেসব খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙা রেখেছে, তার মধ্যে কৃষিই প্রধান। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও ১৭ কোটি মানুষকে খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন এই কৃষকেরা।

একসময় কৃষকের সেচসুবিধার জন্য সরকার ডিজেলে ভর্তুকি দিত। পরে নানা অনিয়মের অভিযোগ আসায় সেই ভর্তুকি তুলে নেওয়া হয়; যদিও তাঁরা ভর্তুকি দামে সার পাচ্ছেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়তির দিকে। এ অবস্থায় প্রথমত সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে সারের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে। দ্বিতীয়ত, সারের মতো কৃষিকাজে ব্যবহৃত ডিজেলেও ভর্তুকি দিতে হবে।

বাংলাদেশে মোট যে ধান উৎপন্ন হয়, তার বেশির ভাগই বোরো। বর্ষা মৌসুমে যেসব ধান উৎপন্ন করা হয়, সেসবের জন্য প্রয়োজনীয় পানি
নদী ও বৃষ্টি থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু বোরো ধান চাষে পুরোটাই সেচের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে যাতে কৃষি, বিশেষ করে বোরোর উৎপাদন কমে না যায়, সে বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে। অন্তত লিটারপ্রতি ডিজেলের যে দাম বাড়ানো হয়েছে, সেই পরিমাণ কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া হোক। ধানের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ভারতের উদাহরণ দিয়ে থাকেন; কিন্তু ভারত যে কৃষকদের সাশ্রয়ী দামে ডিজেল বিক্রি করছে, এখানে তা মনে রাখেন না। কৃষি ও কৃষককে রক্ষা করতে হলে সরকারকে এ স্ববিরোধিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।