Thank you for trying Sticky AMP!!

ভুয়া চিকিৎসকের কাণ্ড

যাঁরা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান, তাঁরা প্রধানত ‘দিন আনি দিন খাই’ শ্রেণির মানুষ। তাঁরা সাধারণত ‘হাতুড়ে চিকিৎসক থাকা ভালো নাকি খারাপ’—এমন বিতর্কে কান দেওয়াকে বিলাসিতা মনে করেন। তাঁদের কাছে কম পয়সায় চটজলদি সেবা পাওয়াই প্রধান বিষয়। তাঁরা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে চিন্তা করেন না। সস্তায় সুরাহা তাঁদের আসল লক্ষ্য। হাতুড়েরা এই ‘সুবিধা’ দিলে কেন তাঁরা তা নেবেন না?

যাঁদের আর্থিক সংগতি আছে, তাঁদের মধ্যেও অনেকে অনেক সময় লম্বা-চওড়া ডিগ্রি দেখে ভুয়া চিকিৎসকদের হাতে রোগযন্ত্রণা লাঘবের ভার সঁপে দেন। চেম্বারের চাকচিক্য, অপেক্ষমাণ রোগীর ভিড় দেখে চিকিৎসকের প্রকৃত বিদ্যার দৌড় বোঝার কোনো উপায় তাঁদের থাকে না। এসব হাতুড়ে ও ভুয়া চিকিৎসকের কাছে গেলে আরোগ্যলাভের চেয়ে জীবনযন্ত্রণা থেকে স্থায়ী মুক্তিলাভের সম্ভাবনা প্রবল। এই মহাসত্য আর্থিক অসংগতি ও অসচেতনতার কারণে সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না। এর সুযোগ নিয়েই হাতুড়ে ও ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য লাগামহীন হয়ে পড়েছে।

 পরিস্থিতি যে কত ভয়ানক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা নেত্রকোনার খালিয়াজুরির ঘটনা থেকে আন্দাজ করা যেতে পারে। পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, সেখানে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ভয় দেখিয়ে ব্লেড দিয়ে এক নারীর স্তন কেটে ফেলেছেন মানিক তালুকদার (৪০) নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। এ ঘটনায় মামলার পর মানিক তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য, মানিক তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ‘চিকিৎসা’ দিচ্ছিলেন। এলাকার এক হতদরিদ্র নারী স্তনের ব্যথা নিয়ে তাঁর কাছে গেলে তিনি তাঁকে বলেন, তাঁর স্তনে ক্যানসার হয়েছে। তিনি ব্লেড দিয়ে নারীর স্তন কেটে ফেলে দেন। ক্ষতস্থানে পচন ধরায় ওই নারী জীবনসংকটে পড়েছেন। খবর থেকে জানা যাচ্ছে, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেছেন, মানিকের তেমন কোনো পড়ালেখা নেই। তিনি চিকিৎসক সেজে দীর্ঘদিন রোগী দেখে আসছেন।

ওসির এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই পুলিশের নজরদারির দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। মানিক দীর্ঘদিন ধরে সবার সামনে প্রতারণা করে আসছেন আর পুলিশ প্রশাসন কিছুই জানতে পারেনি, এটা সত্য হলে বুঝতে হবে ভুয়া চিকিৎসকদের বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারিতে দুর্বলতা আছে। আর যদি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের জ্ঞাতসারেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই বিপজ্জনক প্রতারণা চালিয়ে এসে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে তাঁদের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি কতটা।

 খালিয়াজুরির ঘটনাটি আসলে সারা দেশের অপচিকিৎসাব্যবস্থার একটি খণ্ডচিত্র। এ ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সারা দেশে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো দরকার। ‘নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো’ যুক্তি তুলে ধরে অনেকে অনেক সময় এসব ‘চিকিৎসকের’ পক্ষে নৈতিক সমর্থন দেন। তাঁদের বিষয়েও সাবধানতা জরুরি।