Thank you for trying Sticky AMP!!

ভৈরব নদে দখল-দূষণ

যশোরের অভয়নগর উপজেলার রাজঘাট থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত ভৈরব নদের জায়গা দখল করে যেভাবে অবাধে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন কারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্যে নদের পানি দূষিত হচ্ছে, তাতে এ নদের অস্তিত্ব কত দিন টিকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। 

প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, ভৈরব নদের সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করা হয়েছে অভয়নগর উপজেলার ভাটপাড়া থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত। নদের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে অনেক গুদাম, দোকান ও আবাসিক স্থাপনা। নদসংলগ্ন কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তাদের স্থাপনা সম্প্রসারণ করেছে। নদে অবস্থানরত বার্জ ও কার্গোতে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য নদের মধ্যে বালু, ইট ও পাথর ফেলে পাকা ঘাট তৈরি করা হয়েছে। কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি পড়ছে ভৈরব নদে। এ ছাড়া নদে চলাচলকারী নৌযানের পোড়া তেল, মানুষের পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালির বর্জ্যও পড়ছে এ নদে। এতে নদের পানি দূষিত হচ্ছে। 

 নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় জলাধারের দখল ও দূষণ প্রতিরোধে অভয়নগরে রয়েছে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি। কিন্তু ভৈরব নদের দখল-দূষণ রোধে এই কমিটি কোনো ভূমিকা রাখছে না। প্রতি মাসে এই কমিটির বৈঠক করার কথা থাকলেও তা হয় না। উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করেছে। এরপর প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। কমিটির আর কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দূষণ রোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির এই নিষ্ক্রিয়তা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা যদি সক্রিয় থাকত তাহলে ভৈরব নদ এভাবে দখল ও দূষণের কবলে পড়ত না। দখল ও দূষণের কারণে গত চার দশকে দেশের ৪০৫টি নদ-নদীর মধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে ১৭৫টি। বাকি ২৩০টিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কমে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। এই চিত্র বাংলাদেশের কৃষি, যোগাযোগ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুর জন্যই ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। 

আমরা বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নদ-নদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে দেখি, কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই সেগুলো থেমে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখানে শৈথিল্যের কোনো সুযোগ নেই। 

আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য—সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদ-নদীগুলো সম্পর্কযুক্ত। হাজার বছর ধরেই এসব নদ-নদী আমাদের কৃষি, প্রকৃতি ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। নদী রক্ষা না করলে তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না। এ জন্য নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।