Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষা

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা বিভাগ কিংবা একটি নতুন মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। তার প্রধান যুক্তি হতে পারে এটাই যে ঐতিহাসিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা হলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা দেওয়া। দেশে আমদানি–রপ্তানির যারা চালিকা শক্তি, তাদের প্রতি অধিকতর সহানুভূতিশীল থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে এই দায়িত্ব পালন করে সব পরিস্থিতিতে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। এটা বোধগম্য যে দুই অবস্থার মধ্যে একটা স্বার্থের সংঘাত থাকে।

আমরা যদি উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলেও একটি মৌলিক ভিন্নতা লক্ষ করি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের কাঠামোগত উত্তরাধিকার বহন করে চলার ক্ষেত্রে আমরা ভারতকে নয়, পাকিস্তানকেই বেশি মেনে চলছি। স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানি আমলাতান্ত্রিক কাঠামোকে অবিকল গ্রহণ করেছিলাম। সেটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু বাস্তবতাও ছিল। আমরা পাকিস্তানি কাঠামোর বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভবে নিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে সেটি আমরা অনেক ক্ষেত্রে আজও করে দেখাতে পারিনি। ক্যাব ভোক্তাসংক্রান্ত পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি তুলে আমাদের অতীতের দিকে তাকানোর একটি সুযোগ করে দিয়েছে।

ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা রাষ্ট্রের সূচনায় ১৯৪৭ সালেই ভোক্তাবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমরা মনে করি, ভারত শুরুতেই অন্তত কাঠামোগত দিক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। কেউ বলতে পারেন যে আমলাতান্ত্রিক কাঠামো বদল করাটাই খুব কার্যকর বিষয় হয়তো হবে না। পেঁয়াজের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ে সময়ে সময়ে কথা ওঠার একটা ধারাবাহিকতা আছে। কিন্তু তাদের কারসাজি থেকে ভোক্তাদের মুক্তি মিলছে না।

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান একজন অভিজ্ঞ প্রবীণ সচিব। তিনি মনে করেন, ভোক্তার স্বার্থসংক্রান্ত বিষয়গুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দেখে থাকে। নতুন মন্ত্রণালয় হলে তারা সবার মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজটা অনেক ভালোভাবে করতে পারবে। গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলমন্ত্র হলো সবার আগে নাগরিকের স্বার্থ দেখা। যখন তা বিপন্ন, তখন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করাটাই সমীচীন। এবারের পেঁয়াজ বলেই নয়, অতীতের সব ধরনের ভোগ্যপণ্য–সংকট মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ এবং তার ফলাফল বিবেচনায় নিলে একটি বিষয় পরিষ্কার। আর তা হলো তারা কমবেশি ব্যর্থই থেকেছে। চড়া মাশুলটা সব সময় ভোক্তারাই দিয়েছে। সরকার যথাসময়ে সরাসরি পেঁয়াজ আমদানি করতে কেন পারেনি, তার একটা ব্যাখ্যা হতে পারে এমন যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘ কাজের তালিকায় ক্রেতাস্বার্থ অত বেশি অগ্রাধিকারে আসতেই পারেনি।

প্রসঙ্গক্রমে, আমরা একটা তুলনা দিতে পারি। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অ্যালোকেশন অব বিজনেসে ৩১টি চিহ্নিত কাজের মধ্যে ভোক্তা নামে কোনো শব্দই নেই। প্রাইস অ্যাডভাইজিং বোর্ডস এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ নামে দুটি দফা থাকলেও মানুষ কখনো এসবের ‘দাঁত’ দেখেনি। ভারতের ভোক্তা মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও দুটি বিভাগ আছে। তাদের অ্যালোকেশন অব বিজনেসে ভোক্তা স্বার্থবিষয়ক ৩৫টি বিষয় আলাদাভাবে চিহ্নিত আছে।

সুতরাং আলাদা মন্ত্রণালয় থাকলে অন্তত ভোক্তাস্বার্থের দিকগুলো বেশি মনোযোগের কেন্দ্রে আসবে। একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী অন্তত সারাক্ষণ ভোক্তাদের কাছে জবাবদিহি করবেন—সেটিই–বা কম কিসে। এ মুহূর্তে নতুন মন্ত্রণালয় করা সম্ভব না হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অবিলম্বে আমরা একটি নতুন বিভাগ আশা করতে পারি।