Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোটারবিহীন উপজেলা নির্বাচন

দেশের বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোট গ্রহণের যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা যারপরনাই হতাশাব্যঞ্জক। কারণ, যাঁদের সমর্থনের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের এই আয়োজন, সেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুব কম।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ—এই একটি দৃষ্টান্তই এবারের উপজেলা নির্বাচনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট। সেখানকার চিত্র ছিল এই: বিভিন্ন ভোটকক্ষে বসে আছেন নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী ২২ কর্মকর্তা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ সদস্য ভোটকেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বহাল। ভোট গ্রহণের সময় শুরু হয়েছে, সবাই ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু ভোট দেওয়ার জন্য আগ্রহী মানুষের সারি তো দূরের কথা, প্রথম দেড় ঘণ্টায় ভোট দিতে এলেন মাত্র তিনজন। সারা দিনে ভোট পড়ল মাত্র ৬৭টি। অথচ ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৫৯১ জন। অবশ্য নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, রোববারের উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই দাবি কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে।

প্রশ্ন হলো, ভোটার উপস্থিতি এত কম কেন? সহজ উত্তর: ভোটাধিকার প্রয়োগে ভোটারদের আগ্রহ খুব কম ছিল। কিন্তু আমরা জানি, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত যেকোনো স্তরের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকারকে বাংলাদেশের নাগরিকেরা অত্যন্ত মূল্যবান মনে করেন। এই অধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারার মধ্যে মানুষ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে শ্লাঘা বোধ করেন। দারিদ্র্যপীড়িত ও অধিকারবঞ্চিত নাগরিকদের অনেকে মনে করেন, ভোটাধিকারই তাঁর নাগরিক মর্যাদাবোধের শেষ সম্বল।

সেই ভোটাধিকার প্রয়োগে নাগরিকদের এমন অনীহার কারণ কী?

প্রথমত, বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল এবারের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে দলের সমর্থনভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এর ফলে বিপুলসংখ্যক ভোটার ভোটদানে অনীহা বোধ করেছেন। উপরন্তু অনেক উপজেলায় একটি পদের জন্য প্রার্থী মাত্র একজনই। এর ফলে ভোটার উপস্থিতি আরও কম হয়েছে। যেসব উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলেরই একাধিক প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, সেগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বেশি ছিল। কিন্তু এ ধরনের উপজেলাগুলোতে নির্বাচনের আগের রাতে জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, ভোট গ্রহণের দিনে ব্যালট পেপার ছিনতাই, মারামারি ইত্যাদি ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ভোটকেন্দ্রে ভোটের আগেই জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার দায়ে একাধিক প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে।

অর্থাৎ রোববারের উপজেলা নির্বাচন একদিকে ছিল প্রায় ভোটারবিহীন, অন্যদিকে নির্বাচনী অনিয়মের দোষে কালিমালিপ্ত। ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে নাগরিকদের উৎসাহ হারানোর বিষয়টি আকস্মিক নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে নজিরবিহীন অনৈতিকতা প্রত্যক্ষ করা গেছে, তা ভোটারদের ভোটদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার অন্যতম প্রধান কারণ। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের এই অভিমত সঠিক যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়মের প্রভাব তার পরের সব নির্বাচনে পড়েছে। তিনি মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে যত যা-ই কিছু বলা হোক না কেন, নির্বাচনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ধারাবাহিকভাবে কমেছে, ‘এটা হঠাৎ কোনো ঘটনা নয়’।

ভোটাধিকার প্রয়োগে নাগরিকদের উৎসাহ কমে যাওয়া বা হারিয়ে ফেলা যেকোনো সভ্য জাতির জন্য এক গুরুতর নেতিবাচক লক্ষণ। এর অর্থ স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন ধাপ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সব ধাপেই জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের নীতি হুমকির মুখে পড়েছে। এটা চূড়ান্ত বিচারে ক্ষতিকর হবে। এই প্রবণতা এখনই থামানো প্রয়োজন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অবাধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার মাধ্যমেই শুধু ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।