Thank you for trying Sticky AMP!!

মাটিরাঙ্গায় সংঘর্ষে নিহত ৫

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার গাজীনগরে মঙ্গলবার দুপুরে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও গ্রামবাসীর মধ্যকার সংঘর্ষে ৫ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক। যে ব্যক্তি নিজের বাগানের গাছ ট্রাকে করে করাতকলে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি কি কখনো ভাবতে পেরেছিলেন, ফিরে আসবেন লাশ হয়ে। কেবল তিনি একা নন, তাঁর দুই ছেলে ও আরেক নিকটাত্মীয়ও সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন বিজিবির একজন সদস্যও।

পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, মো. সাহাব মিয়া নামের গাজীনগর এলাকার এক বাসিন্দা মঙ্গলবার সকালে তাঁর নিজের বাগান থেকে কিছু গাছ কাটেন। গাছগুলো ট্রাকে করে আধা কিলোমিটার দূরে করাতকলে নেওয়ার সময় সেগুলো অবৈধ বলে দাবি করে বিজিবি সদস্যরা জব্দ করে তাঁদের হেফাজতে নিতে চান। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। ঘটনা সম্পর্কে বিজিবি সদস্য ও গ্রামবাসীর বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। বিজিবি সদস্যদের দাবি, সামান্য কথা-কাটাকাটিতে গ্রামবাসী তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ হয় এবং তাঁদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলি করেন। অন্যদিকে গ্রামবাসী বলেছেন, সাহাব মিয়ার জমির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে; সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি বাগানের গাছগুলো কেটেছিলেন।

উভয় পক্ষের বক্তব্যের সত্যাসত্যের বিচার ছাড়াই অনুমান করা সম্ভব, ঘটনাটা এত জটিল ছিল না, যা থেকে এমন সংঘর্ষ বেধে গেল যে পাঁচটি প্রাণ ঝরে পড়ল। কাটা গাছগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির, না খাস জমির, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া কি খুব জটিল বিষয় ছিল? গ্রামবাসীর কথা না বিশ্বাস হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন কিংবা থানা-পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেত। কিন্তু কেন ও কী পরিস্থিতিতে নিরস্ত্র গ্রামবাসী ও সরকারের একটি সশস্ত্র সরকারি বাহিনী সদস্যদের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ বেধেছিল, তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত। আর একটি লক্ষণীয় বিষয়, গাছ আটকানো ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সীমান্ত থেকে চার কিলোমিটার দূরে, যেখানে সব ধরনের অপরাধসংক্রান্ত আইন প্রয়োগের দায়িত্ব স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের। বিজিবির সদস্যরা স্থানীয় থানা–পুলিশের সহযোগিতা নেননি কেন, তা–ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে ওই এলাকার বাসিন্দাদের আস্থাহীনতার সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমাদের মনে হয়, শুরুতেই সেদিকে নজর দেওয়া হলে এমন প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়তোবা এড়ানো সম্ভব ছিল। জনসাধারণের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কোনো সশস্ত্র বাহিনীর কোনো অংশেরই আস্থাহীনতার সম্পর্ক প্রত্যাশিত নয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মাটিরাঙ্গার ঘটনায় যথার্থই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আমাদের মনে হয়, মানবাধিকার কমিশনের উচিত ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা, প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, তা নিজে জানা এবং জনগণকে জানানো। পাঁচটি মানুষের জীবনহানির দায়দায়িত্ব কার, আইনানুগ পন্থায় সেটাও নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিজিবির পক্ষ থেকে যে মামলা হয়েছে, তাতে অন্যদের সঙ্গে নিহত চার গ্রামবাসীকেও আসামি করা হয়েছে। যাঁরা গুলিতে মারা গেলেন, তাঁরাই খুনের আসামি হলেন। সুতরাং তদন্ত ও আইন প্রয়োগ ও বিচারপ্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা জরুরি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের চেষ্টা করা প্রয়োজন।