Thank you for trying Sticky AMP!!

মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু-সংকট নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধানত মাদক নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। যদিও এ কথা বিশ্ববাসীর অজানা নয় যে মিয়ানমারের শান স্টেট সন্নিহিত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল থেকে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ইয়াবার মতো মাদক ঢুকছে। মিয়ানমারের অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশটির সামরিক বাহিনীর একাংশের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ কয়েক বছরের নয়, কয়েক দশকের পুরোনো। বাংলাদেশকে আজ যে রক্তাক্ত মাদকবিরোধী যুদ্ধ পরিচালনা করতে হচ্ছে, তার মূলে রয়েছে ইয়াবা। আর এ সর্বনাশা ইয়াবার প্রধান সরবরাহকারী দেশটির নাম মিয়ানমার। অনেকের মতে, রোহিঙ্গা সংকট তৈরি না হলে এ ইয়াবা সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়টি হতে পারত ঢাকা-নেপিডো সম্পর্কের প্রধান প্রতিপাদ্য। কারণ, বাংলাদেশের জন্য ইয়াবার মরণ ছোবল একটি ভয়ংকর জাতীয় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

রাখাইন রাজ্য যেহেতু তাদের দাবি অনুযায়ী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, তাই রাখাইন ও তার আশপাশের মাদক ব্যবসায়ীদের নাড়ি-নক্ষত্র মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসনের অজানা থাকার কথা নয়। তদুপরি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তরফে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে পলাতক মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমারের সদিচ্ছা থাকলে বাংলাদেশের ইয়াবার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে খুব বেশি বেগ পাওয়ার কথা নয়। আমরা আশা করব, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে মাদকের করালগ্রাসে বাংলাদেশের যুবসমাজের বিপথগামী হওয়া এবং সেই ভয়াল সর্বনাশ প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার দিকে তারা চোখ বন্ধ করে রাখবে না। মাদকের উৎস যদি কার্যকরভাবে অকার্যকর করা সম্ভব হয়, তাহলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনও কমে যাবে।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ইয়াবার ব্যাপকতার প্রশ্নে মিয়ানমারের চিফ অব পুলিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থানের নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সীমান্তে মাইন অপসারণের বিষয়টিও একটি দীর্ঘকালীন অমীমাংসিত বিষয়। রোহিঙ্গা সংকটে সম্পর্কের গুরুতর অবনতি হওয়ার আগে বাংলাদেশ মাইন অপসারণ বা ইয়াবার উৎস বন্ধ করার কূটনীতিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। এখন এটা সন্তোষজনক বিষয় যে মাদক, অস্ত্র, নারী-শিশু পাচারসহ সব ধরনের আন্তসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সমন্বিত যৌথ টহল ও নজরদারিতে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।

আমরা আশা করব, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে এ-সংক্রান্ত আলোচনা যাতে আরও বেশি কম সময়ের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে তৎপরতা বাড়ানোই উত্তম। মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বাংলাদেশের মতো মিয়ানমারেরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আর মিয়ানমারের সাংবিধানিক শাসন কাঠামো অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়োগকর্তা খোদ সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং, যিনি দেশটির প্রকৃত নির্বাহী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদেরও অন্যতম সদস্য। সুতরাং মাদক নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা আদায় করতে সম্ভব সব রকম পদক্ষেপ নিতে তাঁর চেষ্টা চলমান রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে, বিরাজমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের নেওয়া অবস্থান অপরিবর্তিত রাখতেই হবে। আবার মাদক নিয়ন্ত্রণকে একটি আলাদা বিষয় হিসেবে গণ্য করে এ বিষয়ে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফরকালেও বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ প্রত্যাশিত। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নেপিডোতে পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলনের আগে আর কোন কোন পর্যায়ে মাদকের বিষয়টি তোলা সম্ভব, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।