Thank you for trying Sticky AMP!!

মাদারীপুরের ডিসির সিদ্ধান্ত

সম্পাদকীয়

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সাম্প্রতিক কার্যক্রমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। দুটি সিদ্ধান্তের একটি হলো ‘ইয়াং’ ছেলেমেয়েদের সন্ধ্যার পরে বাইরে না থাকা এবং শহর-গ্রামের চায়ের দোকানে টেলিভিশন না রাখা এবং অবৈধ বিবেচনায় বাজেয়াপ্ত করা মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করে ফেলা। আপাতদৃষ্টিতে কারও হয়তো মনে হবে, দুটি সিদ্ধান্তই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক। প্রশ্নের জবাবে ডিসি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন যে আইনের আওতায় তাঁর এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা আছে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা থাকা দাবি করাটা ভুল। আইনের অধীনে পাবলিক সার্ভেন্টদের ক্ষমতা থাকে না, এখতিয়ার থাকে। জনস্বার্থে তাঁরা জনসেবক।

মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত চারটি ড্রেজার মেশিন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার দায়ে ডিসিসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৭২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের একটি মামলা হয়েছিল। আদালত তা খারিজ করেছেন। কিন্তু অবৈধ বা বাজেয়াপ্ত করা সম্পদ কারও ‘মৌখিক আদেশে’ ধ্বংস করা প্রচলিত আইন সমর্থন করে না। ২৬ নভেম্বর এই মামলার বাদী আমাদের বলেছেন, তিনি কোনো নোটিশ পাননি। মোবাইল কোর্টও বসেনি। বিষয়টি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি রাখে।

আইনশৃঙ্খলা ও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় জনগণের চলাচল সীমিত করতে ডিসির এখতিয়ার স্বীকৃত। কিন্তু তাঁর এ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটির বহুবিধ মাত্রা আছে। সংক্রামক ব্যাধি আইনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু সেটা উল্লেখ করে নির্দিষ্টভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেকের চলাফেরার স্বাধীনতা আছে। এ ছাড়া অন্য যেকোনো কারণই দেখানো হোক না কেন, তা সংবিধানসম্মত হবে না। চায়ের দোকানে স্বাস্থ্যবিধির শর্ত পূরণ হচ্ছে কি না, শুধু সেটুকুই তদারকির বিষয়। চলাফেরার মতো জনগণের বিনোদনের অধিকার অ–যথাযথ কারণে এবং প্রক্রিয়ায় সেসব একেবারেই ক্ষুণ্ন করা যাবে না।

দেশের সর্বত্র এমনকি মাদারীপুরের আশপাশের জেলার চায়ের দোকানে টিভি চলবে, কিন্তু মাদারীপুরে চলবে না, সেটা কেন যুক্তিসংগত, তা সরকারি আদেশে ব্যাখ্যা করতে হবে। শিবচর উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া চলে। কিন্তু মুখের কথায় তা আইনে পরিণত হয় না। তা ছাড়া ডিসির বক্তব্যে মনে হয়, তাঁর উদ্বেগ যতটা না করোনা নিয়ে, তার থেকে বেশি সামাজিক নীতিনৈতিকতা তথা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। সুতরাং এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে তঁার পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের অনেকেরই দ্বিমত রয়েছে।

ডিসি যদি নির্দিষ্টভাবে ‘মোবাইল জুয়া’ রোধ করতে চান, তাহলে তাঁকে পুলিশের সাইবার টিমের সহায়তা নিতে হবে। এটা অনেক জটিল প্রযুক্তিগত বিষয়। মুঠোফোনে অবৈধ জুয়া অবশ্যই উদ্বেগের এবং তা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ডিসিকে বুঝতে হবে যে মুঠোফোনে জুয়া খেলার জন্য শারীরিক উপস্থিতি অপরিহার্য নয়। পড়ালেখা বাদ দিয়ে আড্ডা বন্ধে শিক্ষক-অভিভাবকদের কাউন্সেলিং দরকার। ১৮ বছরের বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করতে বলা আইনসিদ্ধ কি না, তার থেকেও বড় প্রশ্ন এটা কতটা বাস্তবসম্মত। এ বিষয়ে ‘কয়েক দিন প্রচারণা চালাব, এরপর অভিযানে যাব।’ এভাবে একজন ডিসি বা প্রজাতন্ত্রের অন্য যে কারও অনির্দিষ্ট এবং বাহ্যত ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে নাগরিকের চলাফেরা এবং ‘নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত’ হওয়ার স্বাধীনতা খর্ব করার ধারণা উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থী বা তরুণদের নীতিনৈতিকতা এবং লেখাপড়ায় মনোযোগী করাসহ তাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা আনয়নে সাধারণ উদ্বেগের প্রতি আমাদের অবশ্যই সমর্থন রয়েছে। এবং এ ধরনের সমস্যা শুধু কোনো একটি এলাকায় বিচ্ছিন্ন নয়। সুতরাং এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক সব পদক্ষেপ অবশ্যই আইনসিদ্ধ হতে হবে।