Thank you for trying Sticky AMP!!

মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

গত দুই বছরে ইলিশ যথার্থ ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ হয়ে উঠেছে। এই সময়টাতে দেশে বড় ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে। আগে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বাজারে খুব কমই দেখা যেত। দামও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে ছিল না। এ বছর বাজারে প্রচুর পরিমাণে বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে। সাগর ও নদ-নদীতে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন গত তিন বছরে ৩৫০ গ্রাম বেড়েছে। শুধু আকার ও ওজন নয়, এবার ইলিশের মোট উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। 

ইলিশের আকার ও পরিমাণ বাড়ার মূল কারণ হলো, চলতি বছর বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় ইলিশ না ধরায় তারা বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা ধরা বন্ধ করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। 

এতে কোনো সন্দেহ নেই, এই ৬৫ দিন ইলিশ ধরতে না পারায় জেলেদের যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু এটিও সত্য, পরিমাণে বেশি এবং আকারে বড় ইলিশ ধরা পড়ায় তাঁদের সেই কষ্ট পরে পুষিয়ে গেছে। তাঁরা লাভবান হয়েছেন, দেশবাসীও বড় ইলিশের স্বাদ নিতে পেরেছে। 

মাছ ধরাবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় যে সব পক্ষের লাভ, সে বিষয়টি জেলেদের উপলব্ধিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তাঁদের বোঝানো দরকার, কয়েকটি দিন ধৈর্য ধরলে দিন শেষে তাঁরাই লাভবান হবেন। 

মা ইলিশ রক্ষায় সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত করে ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ শিকার, আহরণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। অনেক জেলে এই নিষেধাজ্ঞা না মেনে ইলিশ ধরতে যাচ্ছেন। গত কয়েক দিনে চাঁদপুরে কমপক্ষে ২০ জনকে ইলিশ শিকারের অভিযোগে আটক করা হয়েছে এবং তাঁদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে অন্তত ৬০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও তিনটি নৌকা জব্দও করা হয়েছে। 

সন্দেহ নেই, এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দরিদ্র জেলেদের পরিবারের সদস্যরা সংকটের সম্মুখীন হবেন। কিন্তু উপকূলের সব জেলেকেই বুঝতে হবে তাঁদের নিজেদের, সর্বোপরি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

সরকারের দিক থেকে এ বিষয়ে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উদ্দীপনামূলক প্রচারাভিযান চালানো যেতে পারে। নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা ঠেকাতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জেলেদেরও মানসিকভাবে এই কার্যক্রমে যুক্ত করা দরকার। এই লক্ষ্যে উপকূলীয় এলাকায় প্রচারকাজ চালানো উচিত। জেলেরা নিজেরাই যখন নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরত থাকবেন, তখন ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ অনিবার্যভাবেই উজ্জ্বলতর হয়ে উঠবে।