Thank you for trying Sticky AMP!!

মোহনা গ্রামের বানভাসি মানুষ

এবারের বন্যায় উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। বন্যার আঘাত এসেছে মধ্যাঞ্চলেও। লাখ লাখ মানুষ এখনো বিপন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে নিচু এলাকার মানুষের জীবিকার পথ পুরোই বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ তিন সপ্তাহ পরও বন্যাদুর্গত প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। 

প্রথম আলোর শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধির পাঠানোর খবরে জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর পূর্বপাড়ার মোহনা গ্রামে ৫০টি পরিবার বন্যায় সবকিছু হারালেও এখন পর্যন্ত কেউ কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি। এই গ্রামের পুরুষেরা পাশের গ্রাম দিনমজুরি খেটে এবং নারীরা বাঁশের চাটাই তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বন্যায় কারণে তিন সপ্তাহ ধরে তঁাদের কাজকর্ম বন্ধ আছে। এ রকম সহায়–সম্বলহীন মানুষের উপার্জন বন্ধ থাকলে ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁদের কী অবস্থা তৈরি হতে পারে, অনুমান করা কঠিন নয়। মোহনা গ্রামের একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, কোরবানি ঈদের দিন তাঁর ঘরে আধা সের চাল ছিল। এই চাল দিয়ে আধা পেট খেয়ে ছিলেন পরিবারের চারজন সদস্য। ঈদের পরদিন পাশের গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁদের জন্য এক বেলা ভালো খাবার পাঠিয়েছিলেন। প্রতিবেশীর বদান্যতায় ওই পরিবারের এক বেলা ভালো খাবারের ব্যবস্থা হলেও সবার সেই সৌভাগ্য হয়নি। বেশির ভাগ বাসিন্দা খেয়ে না–খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জানিয়েছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে তাঁর ওয়ার্ডে সরকারিভাবে ১৬১টি পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্য থেকে তিনি মোহনা গ্রামের ছয়জনকে এই চাল দিতে পেরেছেন। বাকি ৪৪টি পরিবারের কী হবে? 

উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছেন, বন্যার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তালিকা জমা দেওয়ার কথা। এত দিন তঁারা কী করেছেন? 

ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এই হাহাকার কেবল মোহনা গ্রামে নয়, প্রায় প্রতিটি বন্যাদুর্গত এলাকার চিত্র কমবেশি একই। বিশেষ করে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যে ওয়ার্ডে ২ হাজারের বেশি মানুষ বন্যাকবলিত, সেই ওয়ার্ডে ১৬১ জনকে চাল দেওয়া হলে বাকিরা কী খাবেন। ওই চাল ছিল ঈদ উপলক্ষে পাঠানো ভিজিএফ কর্মসূচির। বন্যাদুর্গতদের জন্য কোনো ত্রাণসামগ্রী গতকাল পর্যন্ত পৌঁছেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের এই দায়িত্বহীনতার জবাব কী। 

অবিলম্বে মোহনা গ্রামসহ বন্যাদুর্গত সব এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো হোক।