Thank you for trying Sticky AMP!!

রংপুরের জলাবদ্ধতা

যে শ্যামাসুন্দরী খাল রংপুরবাসীর সমৃদ্ধি ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে পারত, সেই শ্যামাসুন্দরী খাল তাদের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে পানিনিষ্কাশনের জন্য কোনো শহরের মধ্য দিয়ে পরিকল্পিত খাল নির্মাণের দ্বিতীয় নজির নেই।

সাম্প্রতিক বন্যায় যে রংপুর শহরের রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি ডুবে গেছে, তারও কারণ শ্যামাসুন্দরী ও শহরের পার্শ্ববর্তী কেডি (কৃষ্ণধন ঘোষ) খাল ভরাট হয়ে যাওয়া। শ্যামাসুন্দরী খালটি ১৩০ বছরের পুরোনো। রংপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন ১৮৯০ সালে তাঁর মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে এ খাল খনন করেছিলেন। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ, স্থানভেদে ২৪ ফুট থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত চওড়া শ্যামাসুন্দরী বর্তমানে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। আর দেড় শ বছর আগে পৌর প্রশাসক কৃষ্ণধন ঘোষ প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খনন করেন। খাল দুটি একাধিকবার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি কার্যকর হয়নি। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই শহর ডুবে যায়।

সম্প্রতি রংপুর মহানগর উন্নয়ন ফোরাম খাল দুটি সংস্কারের দাবিতে শহরে মানববন্ধন করেছে। ফোরামের নেতারা জলাবদ্ধতার জন্য রংপুর সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন। উন্নয়নের নামে শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খালের উন্নয়ন-সংস্কার না করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়রের দাবি, তাঁরা ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ১৫৯টি উচ্ছেদ করেছেন। খাল সংস্কারের কাজও শিগগিরই শুরু হবে।

সরকার শ্যামাসুন্দরী খালের সংস্কারের জন্য ১০০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু খাল সংস্কার করলে কোনো লাভ হবে না, যদি না সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা যায়। শহরের সব ময়লা খালে ফেলা হলে খননের কিছুদিনের মধ্যেই ভরাট হয়ে যাবে। এ জন্য খালের দুই পাড়ে গাইডওয়াল বা সীমানাদেয়াল নির্মাণ করতে হবে। পয়োনিষ্কাশনের আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সীমানাদেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

পাউবোর এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, পরিকল্পনা নেওয়া ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিরাট ফারাক থাকে। যত দ্রুত সম্ভব শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খালের সংস্কার করতে হবে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন ও নাগরিকদেরও সজাগ থাকতে হবে, যাতে শহরের ময়লা-আবর্জনা খালে না ফেলা হয়। একদিকে খাল খনন, অন্যদিকে ময়লা–আবর্জনা ফেলে সেটি ভরাট করা—উন্নয়নের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ হোক।