Thank you for trying Sticky AMP!!

রাষ্ট্রাচারে নারীর প্রতি কেন এ বৈষম্য

সম্পাদকীয়

কথায় বলে, নেই কাজ তো খই ভাজ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সুপারিশ দেখে এ বাংলা প্রবাদ মনে পড়ল। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আছে, যাদের দায়িত্ব হলো মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজে গাফিলতি বা অনিয়মের অভিযোগ এলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি গত রোববার এক আজগুবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিকল্প ব্যবস্থা করার সুপারিশ পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে।

বৈঠকের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, বৈঠকে একজন সদস্য বলেন, সাধারণত নারীরা জানাজায় অংশ নেন না। কিন্তু নারী ইউএনওরা গার্ড অব অনারে অংশ নেন। এ নিয়ে সমাজে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে যেখানে নারী ইউএনও আছেন, সেখানে বিকল্প একজন পুরুষ কর্মকর্তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বা এ ধরনের কোনো কর্মকর্তাকে বিকল্প রাখা যেতে পারে। অদ্ভুত আবদার বটে!

কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, ওয়ারেসাত হোসেন ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে একজন সদস্য নারী ইউএনওর বিষয়টি উত্থাপন করলে অন্যরাও মেনে নেন এবং সুপারিশ আকারে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

বৈঠকে ওই সদস্য রাতে গার্ড অব অনার না দিয়ে দিনে দেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমাদের দ্বিমত নেই। গ্রামাঞ্চলে রাতে গার্ড অব অনার দেওয়া হলে অনেকের পক্ষে হাজির হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু গার্ড অব অনারের ক্ষেত্রে নারী ইউএনওর বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলা যেমন বৈষম্যমূলক, তেমনি সংবিধানবিরোধী। সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদের (১)–এ বলা আছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী-পুরুষে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না। একই অনুচ্ছেদের (২)–এ আছে, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবে।

যে সাংসদেরা সংবিধান মেনে চলবেন বলে শপথ নেন, তাঁরা নারীর প্রতি অসম্মানজনক এ রকম একটি সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন? এ প্রসঙ্গে সংসদীয় কমিটি জানাজার প্রসঙ্গ তুলেছে। তাঁদের মনে রাখা দরকার যে জানাজা হলো একটি ধর্মীয় আচার। আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়া হলো রাষ্ট্রীয় আচার। কেবল মৃত ব্যক্তিকে নয়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদেরও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সেখানে ধর্ম বা নারী-পুরুষের বৈষম্য চলতে পারে না।

মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ, তালিকা দেওয়া থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক —সবকিছুকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনিয়ম করে আসছে। এসব নিয়ে সংসদীয় কমিটির কোনো রা নেই। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে কে থাকবেন, কে থাকবেন না তা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছে। তাদের এ উদ্যোগ কেবল অগ্রহণযোগ্য নয়, নিন্দনীয়ও।

সংসদীয় কমিটির প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন নিজেদের ভুল স্বীকার করে অবিলম্বে সুপারিশটি প্রত্যাহার করে নেয়।