Thank you for trying Sticky AMP!!

লকডাউন ফলপ্রসূ হোক

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী আট দিনের যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, তার যথাসম্ভব সর্বোচ্চ সুফল পাওয়ার চেষ্টাই হওয়া উচিত গোটা জাতির এই মুহূর্তের কর্তব্য। কারণ, মহামারি পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এবং ব্যাপক পরিসরে। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জেলায় সংক্রমণের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেশি; কিন্তু ঢাকার বাইরে এ বিষয়ে সতর্কতা কম, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় শিথিলতা কাটেনি। গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে, অতি উচ্চমাত্রায় সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম আফ্রিকান ধরনের করোনাভাইরাস এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে আমাদের সংক্রমণঝুঁকি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে। গতকাল পরপর দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৯০ জনের বেশি এবং মোট মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার পেরিয়ে গেছে। এখন সবাই সম্মিলিতভাবে এ ঝুঁকি মোকাবিলায় উদ্যোগী না হলে মহামারি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

লকডাউন চলাকালে চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করার পর পেশাগত দায়িত্ব পালন ও জীবিকা আহরণের প্রয়োজনে চলাচলকারী মানুষের জন্য কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। ‘মুভমেন্ট পাস’ বা চলাচলের অনুমতিপত্র পাওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল আকার ধারণ করেছিল। তাই এ সমস্যা লাঘবের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, ১৮ ধরনের পেশাজীবী মানুষের মুভমেন্ট পাস সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না। তাঁরা নিজ নিজ পেশাগত পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চলাচল করতে পারবেন। আমরা সরকারের এ সুবিবেচিত পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে বলতে চাই, এখন প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন আরও বেড়ে গেল: মুভমেন্ট পাসের প্রয়োজন হবে না বলেই স্বাভাবিক সময়ের মতো যথেচ্ছ চলাচল অব্যাহত থাকবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না যাওয়া এবং সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলার বিষয়টি কোনোভাবে লঘু করে দেখার সুযোগ নেই।

এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা যতটা ফলপ্রসূ হতে পারে, তার চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে নাগরিকদের নিজের ইচ্ছায় চলাচল সীমিত করা। নাগরিকেরা দায়িত্বশীল আচরণ করলে চলাচলের বিধিনিষেধ ভঙ্গ করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলা ও জরিমানা আদায় করার মতো পদক্ষেপের কোনোই প্রয়োজন হবে না। এটা শুধু আইন বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয় নয়, যে উদ্দেশ্যে চলাচল সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা থেকে সর্বাধিক সুফল পাওয়ার বিষয়। এটা সর্বজনীন স্বার্থের প্রশ্ন।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেই চলাচল বাড়তে শুরু করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। যদি এমন হয়ে থাকে যে প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে সরকারি ছুটি ছিল বলে চলাচল কম ছিল, আর তার পরদিন ছুটি ছিল না বলে চলাচল বেড়েছে, তাহলে এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ, এতে প্রতীয়মান হয়, এই লকডাউনের প্রতি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার ঘাটতি রয়েছে। এভাবে চললে আগামী কয়েক দিন চলাচল আরও বাড়তে পারে এবং তার ফলে সংক্রমণ নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে। অফিস-আদালত খোলা অবস্থায় লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব যানবাহনে কর্মীদের আনা-নেওয়ার বিষয়টির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ, এটা নিশ্চিত করা না হলে সড়কে রিকশার মতো ছোট যানবাহনের ভিড় বেশি হবে।

মহামারির দ্বিতীয় আঘাতটি এসেছে দৃশ্যত দ্বিগুণ তীব্রতা ও শক্তি নিয়ে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে দাঁড়াতে হবে; প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বশীল আচরণ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।