Thank you for trying Sticky AMP!!

লকডাউন শিথিল করা

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র আলোচনা চলছে। এই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক হলো কি না, এ প্রশ্ন উঠেছে। আবার বিপুলসংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন জীবিকাসহ অর্থনৈতিক বাস্তবতাও যে আর অস্বীকার করা চলে না, সে কথাও বলা হচ্ছে। একই বিবেচনায় পৃথিবীর অনেক দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে ঝুঁকির বিষয়টি কোথাও খাটো করে দেখা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো এলাকায় লকডাউন শিথিল করার সময় কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের বলে দিয়েছে, এই শিথিলতার ফলে যদি সংক্রমণ আবার বাড়ে, তাহলে আবারও লকডাউনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

আমাদের অর্থনৈতিক বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের ধনী দেশগুলোর মতো নয়। এ দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনধারণ নির্ভর করে দৈনিক আয়রোজগারের ওপর। ইতিমধ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে তাদের আয় বন্ধ। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। অনেক মানুষ খাদ্যকষ্টের মধ্যে পড়েছে। হতদরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষেও অনির্দিষ্টকাল ধরে কর্মহীন, রোজগারহীন থাকা সম্ভব নয়।

এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে লকডাউন শিথিল করা বা কোথাও কোথাও তুলে নেওয়া হলে স্বাস্থ্যগত দিকে যে বাড়তি ঝুঁকির পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, তা–ও খেয়াল রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে, কোনো পরিস্থিতিতেই সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোনো রকমের শিথিলতার সুযোগ নেই।

সবকিছু খুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে যেন এই বার্তা না যায় যে বিপদ কেটে গেছে। বরং আরও জোরালোভাবে বার্তা পৌঁছাতে হবে যে বিপদ একটুও কমেনি; স্বাভাবিক কাজকর্ম চলাকালে মানুষে মানুষে সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এখন প্রতিটি মানুষকে নিজের সুরক্ষার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে নিজেকেই।

আমাদের দেশে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। ভাইরাসটির সংক্রমণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণার অভাবে অনেক মানুষ সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। গ্রাম, ইউনিয়ন এবং পৌর শহরগুলোর ওয়ার্ড পর্যায়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর বাড়তি জোর দিতে হবে। নতুনভাবে প্রচারণা শুরু করতে হবে প্রধানত এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে যে প্রত্যেককে নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার মাধ্যমে।

সংক্রমণমুক্ত থাকার জন্য অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে। ভিড় এড়াতে হবে, পরস্পরের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে যেতে হবে। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ও পাড়া-মহল্লা পর্যায়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপক প্রচার চালানোর পাশাপাশি নাগরিক দায়িত্বশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পাড়া-মহল্লায় এ কাজে উদ্যোগী হতে পারে। সচেতন নাগরিকেরা ব্যক্তিপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচারণা চালাতে পারেন।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপের অর্থ এটা নয় যে সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর দায়িত্ব কমেছে। বরং যে বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি হতে চলেছে, তা মোকাবিলার জন্য সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে।