Thank you for trying Sticky AMP!!

লাইসেন্স করতে মাইকে ডাক

কেউ রাস্তায় যানবাহন চালাতে চাইলে তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে—এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এটি সাধারণের বোধগম্য সাধারণ আইনের কথা। কিন্তু সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসা অসাধারণ কথাটি হলো, রাজপথে যানবাহন যাঁরা চালান, তাঁদের বিশাল একটি অংশের লাইসেন্স নেই। কেন নেই, সে প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে হাজারটা কারণ পাওয়া যাবে। কিন্তু যে কারণটি প্রায় সবাই চোখ বুজে প্রথমেই বলবেন, সেটি হলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সেখানকার দালালদের হয়রানি। অনেকেই আছেন, যাঁদের লাইসেন্স নেই বা লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং তাঁরা লাইসেন্স করতে বা নবায়ন করতে চান, কিন্তু বিআরটিএর দালালদের খপ্পরে পড়ার ভয়ে সেখানে যান না। ঝামেলা এড়াতে অবৈধভাবে তাঁরা গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালান। ট্রাফিক পুলিশ তাঁদের রাস্তার মধ্যে ধরেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, জরিমানা হয়। অথচ এই চালকদের মধ্যে লাইসেন্স না করার মনোবৃত্তি মোটেও নেই।

চালকেরা যে নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ পেলে লাইসেন্স করতে আগ্রহী হন—সিলেটের ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা তঁাদের উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ‘যাঁরা যানবাহনের বৈধ লাইসেন্স করতে আগ্রহী, দয়া করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান।’ তাৎক্ষণিকভাবে ১৮-২০ জন সারিতে দাঁড়িয়ে গেছেন। তাঁরা নিজেদের নাম, মুঠোফোন নম্বর পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত করেছেন। এরপর লাইসেন্স পেতে কী কী করতে হবে, সেগুলো পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সিলেট নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ ও অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা উপস্থিত থেকে এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, যাঁরা লাইসেন্স করতে নাম ও মুঠোফোন নম্বর জমা দিয়েছেন, প্রথমে তাঁদের তালিকা ট্রাফিক বিভাগের কার্যালয়ে নেওয়া হবে। পরে লাইসেন্সপ্রত্যাশী ব্যক্তিরা ওই কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসবেন। এরপর নির্দিষ্ট একটি দিনে বিআরটিএ কার্যালয়ে একজন সার্জেন্টের তত্ত্বাবধানে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স করতে সহযোগিতা করা হবে। এতে লাইসেন্স করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি দালালদের খপ্পরে পড়বেন না। তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হবে না। চৌহাট্টা মোড়ে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত এই এক ঘণ্টায় ৯২ জন লাইসেন্স করতে ইচ্ছুক চালক পুলিশের খাতায় নিজেদের নাম ও মুঠোফোন নম্বর তালিকাভুক্ত করেন। তাঁরা সবাই বলেছেন, বিআরটিএ কার্যালয়ে গেলে দালালদের হাতে পড়ে টাকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেটা এড়াতে তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

কথা হলো, লোকজনকে লাইসেন্স করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের নয়। বিআরটিএর অসহযোগিতার কারণেই পুলিশকে এ উদ্যোগ নিতে হয়েছে। পুলিশকে এ কাজের জন্য অবশ্যই অভিনন্দন জানাতে হবে। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে বিআরটিএর আসল অবস্থাও খোলাসা হয়েছে। সেদিকেই এখন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।