Thank you for trying Sticky AMP!!

শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা দরিদ্র মানুষের সামাজিক সুরক্ষার প্রসঙ্গ যখন ওঠে, তখন দৃষ্টি যায় গ্রামাঞ্চলের দিকে। এটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ, কৃষিপ্রধান এ দেশের অধিকাংশ মানুষের বাস গ্রামাঞ্চলে। দারিদ্র্য গ্রামাঞ্চলেই বেশি, সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজনও সেখানে বেশি। কিন্তু তা বলে শহর-নগরে দরিদ্র মানুষ নেই কিংবা সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, এমন দুস্থ ও অসহায় মানুষ নেই—এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। বাস্তবিক অর্থে এটা সত্যও নয়।

২০১৪ সালে যে বস্তিশুমারি হয়েছিল, তাতে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বস্তির সংখ্যা ১৯৯৭ সালে ছিল ২ হাজার ৯৯১। আর ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৩ হাজার ৯৯৫। আজ থেকে ৬ বছর আগেই বস্তিবাসী জনসংখ্যা ২২ লাখ ৩২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ৩২ হাজার ছিলেন নারী। তাঁদের মধ্যে ৫ শতাংশ ছিলেন বিধবা। তারপর ছয় বছর পেরিয়েছে; এই প্রতিটি সংখ্যা কতটা বেড়েছে, সে সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ পরিসংখ্যান নেই। শহরাঞ্চলের এসব বস্তিবাসী মানুষ নানা পন্থায় আয়-রোজগার করে জীবনধারণের সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন; কিন্তু নিয়মিত আয়-রোজগার নেই, বয়স ও স্বাস্থ্য কাজ করার উপযোগী নয়, এমন অনেক মানুষ আছেন, বিশেষত নারী আছেন, যাঁদের সামাজিক সুরক্ষা প্রয়োজন।

গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ঢাকা মহানগরের ভেতরে কড়াইল বস্তিতে বসবাসরত এক বিধবা নারীর দুর্দশার বিবরণ ছাপা হয়েছে। তাঁর স্বামী মারা গেছেন ২০ বছর আগে। তাঁর পাঁচ ছেলের মধ্যে তিনজন বিয়ে করে নিজেদের সংসার নিয়ে থাকেন। বাকি দুই ছেলে অসুস্থ। তিনি বলেন তাঁর বয়স ৬৭-৬৮ বছর, কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে তাঁর বয়স ৫৯ বছর। তিনি সরকারের দেওয়া বয়স্ক ভাতা পান না। কারণ, তা পেতে হলে বয়স ৬২ বছর ও তার বেশি হতে হয়। দুই অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে এই বয়স্ক নারীর জীবন অত্যন্ত কষ্টকর; তাঁকে প্রতিদিন অন্তত তিনটি বাসায় কাজ করতে হয়।

সরকারের ২৩টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪৩টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সারা দেশে চালু রয়েছে, কিন্তু এই নারী এবং তাঁর বয়সী ও তাঁরই মতো দুর্দশাগ্রস্ত আরও অনেক নারী সেসব কর্মসূচির বাইরে পড়ে রয়েছেন। তাঁর বয়স্ক ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি বোধগম্য; কিন্তু বিধবা হিসেবে তাঁর যে ভাতা প্রাপ্য, তা-ও তিনি পাচ্ছেন না। কারণ, ‘বিধবা ও স্বামীর দ্বারা নিগৃহীত’ নারীদের জন্য সরকার যে ভাতার ব্যবস্থা করেছে, তা নগর বা সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার জন্য প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ শহরাঞ্চলের বস্তিবাসী নারীদের মধ্যে যে ৫ শতাংশ বিধবা, তাঁরা সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে পড়ে রয়েছেন; এটা দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।

সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করে। এ অর্থে যাতে প্রকৃত দরিদ্র, দুস্থ, অসহায় মানুষের উপকার হয়, তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়; সেগুলো দূর করা উচিত। আর শহরাঞ্চলের বস্তিবাসীদের মধ্যে যাদের সুরক্ষা প্রয়োজন, তাদেরও এ কর্মসূচিগুলোর আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষায় গ্রাম-শহরের ভেদাভেদ করা উচিত নয়।