Thank you for trying Sticky AMP!!

শান্তি সূচকে বাংলাদেশ

সম্পাদকীয়

শান্তি সূচকে বাংলাদেশের সাত ধাপ এগিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই আনন্দের সংবাদ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখলে সাত ধাপ এগোনোর পরও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। যেসব মানদণ্ডে এই সূচক করা হয়, তার মধ্যে প্রথমেই আসে অর্থনৈতিক সমতা, নারী-পুরুষের সাম্য এবং ধর্মবর্ণ-জাতি–নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তাবিধান। সেই অবস্থানে পৌঁছাতে আমাদের আরও বহুদূর হাঁটতে হবে।

বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস বৈশ্বিক শান্তি সূচক-২০২১ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি নিরাপত্তা, সুরক্ষা, সামরিকীকরণ এবং চলমান সংঘাতের মতো ছয়টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ সূচক তৈরি করেছে। বরাবরের মতো আইসল্যান্ড তালিকার শীর্ষে। এরপর আছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও কানাডা।

২০২১ সালের বৈশ্বিক শান্তি সূচক (জিপিআই) অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ২ দশমিক শূন্য ৬৮। শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৯১তম স্থানে উঠে এসেছে। আগের বছর ছিল ৯৭তম।

তালিকা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশের ওপরে আছে নেপাল ও ভুটান। এ অঞ্চলে সবচেয়ে অশান্তির দেশ হিসেবে চিহ্নিত আফগানিস্তান। এরপর পাকিস্তান। প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ১৩৫তম। শ্রীলঙ্কা গত বছরের চেয়ে ১৯ ধাপ পিছিয়ে। এশিয়ায় সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ সিঙ্গাপুর। বিশ্বে এর অবস্থান একাদশতম।

শ্রীলঙ্কার এই অবনতি আমাদের জন্যও শিক্ষণীয়। একদা শান্তির দ্বীপ বলে পরিচিত শ্রীলঙ্কায় বহু বছর ধরে জাতিগত সংঘাত চলে আসছিল। শক্তি প্রয়োগে সেই সমস্যার সমাধান অশান্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। বাংলাদেশ সমগোত্রীয় দেশ। শতকরা ৯৮ শতাংশ মানুষ এক ভাষাভাষী। পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংঘাতও আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি, যা বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল। তাই বাংলাদেশকে শান্তির সড়কে নিয়ে আসতে হলে সেই চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অর্থ এই নয় যে রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশের পথ রুদ্ধ করা। দলমত-নির্বিশেষে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই একটি উদার ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।

যেকোনো রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক ন্যায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমতা জরুরি। সূচকে প্রথম হওয়া আইসল্যান্ডের ধনী-গরিবের ভেদাভেদ তেমন নেই। সেখানকার ৯৭ শতাংশ নাগরিক মধ্যবিত্ত। অর্থাৎ জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো নিয়ে তাদের বিচলিত থাকতে হয় না। দ্বিতীয়ত উত্তর আটলান্টিক মহানগরের মাঝখানে অবস্থিত এই ছোট্ট দেশটিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য নেই। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও উদার চিন্তার দিক দিয়েও দেশটি এগিয়ে।

আমাদেরও সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। দলীয় ও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাই কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু যখন আমরা নির্বিচার মানুষ নিখোঁজ হতে দেখি, নারীর ওপর পুরুষের সহিংসতা বাড়তে থাকে, তখন মনে হয় শান্তি সুদূরপরাহত।