Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষা আইনের খসড়া

সম্পাদকীয়

২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১১ সালেই শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সে সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন ডা. দীপু মনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনের খসড়া চূড়ান্ত না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নকালে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা একে শিক্ষার উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছিলেন। শিক্ষা আইন নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে, সুপারিশ ও প্রস্তাব আনা হয়েছে। একবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়।

প্রথম আলোয় গত শুক্রবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের যে খসড়া করেছে, তাতে কোচিং সেন্টার ও সহায়ক বই রাখার কথা আছে। তবে শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলাকালে কোচিং করাতে পারবেন না। শিক্ষা ক্ষেত্রে কোচিং ও সহায়ক বা গাইড বই নিয়ে বিতর্ক বহু পুরোনো। আগে কোচিং শহরাঞ্চলে সীমিত পর্যায়ে ছিল। এখন তা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। একশ্রেণির শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের চেয়ে কোচিং করাতেই ব্যস্ত থাকেন। নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেও তাঁদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। অভিভাবকদের মধ্যেও এই মানসিকতা তৈরি হয়েছে যে কোচিং না করালে ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারবে না। আর কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সহায়ক বই। পাঠ্যবই পড়লে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মোটামুটি জানতে পারে। কিন্তু নোট বা সহায়ক বই পড়ানো হয় পরীক্ষায় পাসের জন্য, জ্ঞান আহরণের জন্য নয়।

আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত ২০১০ সালের শিক্ষানীতি সর্বমহলেই প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু একটি ভালো নীতি প্রণয়ন করলেই তো হবে না, তা বাস্তবায়ন করেও দেখাতে হবে। মূল সমস্যাটি সেখানেই। অনেকে কোচিং সেন্টার খোলা ও সহায়ক বইয়ের পক্ষে নানা যুক্তি দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু দুটোই শিক্ষায় বৈষম্য বাড়াচ্ছে। যাঁদের সামর্থ্য নেই, তাঁদের সন্তানেরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু অবকাঠামোগত সমস্যার অজুহাত তুলে তা-ও বন্ধ রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সরকার গঠিত ড. কুদরাত-এ-খুদা কমিশনই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা এবং একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেছিল। আমরা মনে করি, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে হলেও এর বাস্তবায়ন জরুরি।

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে এসব ত্রুটি সত্ত্বেও সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দূরশিক্ষণ এবং ই লার্নিং পদ্ধতিতে কোর্স চালানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা যৌক্তিক বলেই মনে করি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এরপর মন্ত্রিসভা কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা হবে এবং মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হবে অনুমোদনের জন্য। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার শিক্ষা আইনে এমন কিছু রাখবে না, যা কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত এবং সত্যিকার পাঠ গ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দেশবাসী কোচিং ও সহায়ক বইমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থাই দেখতে চায়।