Thank you for trying Sticky AMP!!

শুদ্ধি অভিযানের পরিণতি

মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন যে অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁরা মুখে যা-ই বলুন না কেন, এত দিন দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেই দেশে দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আর দুর্নীতিবাজেরা আইনকানুন, নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধের যে তোয়াক্কা করে না, সম্প্রতি আটক যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার কর্মকাণ্ডই তার প্রমাণ।

ক্ষমতা ও দুর্নীতি পরস্পর হাত ধরে হাঁটে। বিএনপির আমলে দলটির নেতা-কর্মীরা যে ভাষায় কথা বলতেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও হুবহু একই ভাষায় কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ টানা ১১ বছর ক্ষমতায় আছে। ফলে ক্ষমতার বলয়ে থেকেই যে দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন, সেটি জানতে গবেষণার প্রয়োজন হয় না। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রায় প্রতিদিনই অপরাধের খবর ও ছবি প্রকাশিত হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরে দুর্নীতিবাজ-টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান শুরু হলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা যেমন প্রকাশ পেতে শুরু করে, তেমনি জনমনে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল যে এ অভিযান কঠোরভাবে চলবে। আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছিলাম এ কারণে যে বিলম্বে হলেও দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে পারলে দেশ ও জনগণ ভয়াবহ বিপদ থেকে রেহাই পাবে। দুর্নীতিবাজেরা শুধু উন্নয়নকেই বাধাগ্রস্ত করছে না, মানবিক নীতিনৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধেও আঘাত হানছে। সরকারের শুদ্ধি অভিযানের পর মানুষ আশা করেছিল ক্ষমতার বলয়ে এসব অপরাধের মাত্রা কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু সেই শুদ্ধি অভিযান কোনো পরিণতির পথে এগোয়নি। যঁাদের ছত্রচ্ছায়ায় তারা যাচ্ছেতাই করার সুযোগ পেয়েছে, তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন। দুর্নীতিবাজেরা আগের মতো দৌরাত্ম্য দেখিয়ে চলেছে।

মহিলা লীগের একটি জেলা কমিটির নেত্রী যদি এতটা বেপরোয়া হতে পারেন, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা নেতা–কর্মীরা কী করেছেন, সেটি অনুমান করা কঠিন নয়। ক্যাসিনো–কাণ্ডের পর গ্রেপ্তার হওয়া গেন্ডারিয়া আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাড়ি থেকে নগদ টাকার সঙ্গে উদ্ধার হয়েছিল সোনার মজুত। এই দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন অপর একটি বাড়ি থেকে এর মাস ছয়েক পর সাড়ে ২৬ কোটি টাকা উদ্ধার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সহযোগী ইংরেজি দৈনিক শিরোনাম করেছে ‘নট লেস দ্যান অা ব্যাংক’। আর এসব ঘটছে সরকারের ‘শুদ্ধি অভিযানের’ মধ্যেই।

গেন্ডারিয়ার দুই ভাইয়ের বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা বা পাপিয়ার নানা কর্মকাণ্ডের যেসব বিবরণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, তা আমাদের হতবাক করে দিচ্ছে। দিনের পর দিন এসব ঘটনা ঘটল কী করে? প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের মদদ ছাড়া এমন উত্থান কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রশ্ন হচ্ছে কারা এই পেছনের শক্তি? তাঁরা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন?

সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাবি, সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারছেন কি না জানি না, সেই উন্নয়নের লাভের গুড় প্রায় পুরোটাই খেয়ে নিচ্ছে দুর্নীতিবাজেরা। রাঘববোয়াল দুর্নীতিবাজদের কেশাগ্র স্পর্শ না করে এ রকম বাছাই করা অভিযান চালালে আর যা–ই হোক দুর্নীতির প্রকোপ কমবে না। কাজের কাজ কিছু চাইলে অভিযান হতে হবে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন।