Thank you for trying Sticky AMP!!

শেরপুরের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

শেরপুর জেলার তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষেরা ভিক্ষা বা চাঁদাবাজি ছেড়ে সম্মানজনক কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের উপলব্ধি হচ্ছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করলেও কেউ তাঁদের ভালো চোখে দেখে না, সইতে হয় লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। ওই জেলায় ৫২ জন হিজড়া রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৪০ জনই গত বুধবার স্থানীয় একটি নাগরিক সংগঠন ও দুটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত হিজড়াদের কর্মসংস্থানবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন।

সভায় একজন হিজড়াও বলেননি যে তাঁরা যেসব কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, সেটাই করতে চান। বরং তাঁদের আলাপচারিতায় বেরিয়ে আসে, সমাজের মূল স্রোতোধারায় ফিরতে চান তাঁরা। এ জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়েছেন, বিশেষ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ভিক্ষাবৃত্তি, স্থানীয় বিভিন্ন উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে হানা দিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেই তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ পথ ছেড়ে তাঁরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী, মালি, গাড়িচালক ও ঝাড়ুদার হতে চান। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ এবং ঋণ বা অনুদান পেলে তাঁরা মুদিদোকান, টেইলারিং ও বিউটি পারলারের উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ দেখান।

সারা দেশে ১১ হাজারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে পার হয়েছে ছয় বছর। তাঁরা বয়স্ক ভাতা, উপবৃত্তি, প্রশিক্ষণসহ কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সরকারের এসব সুযোগ-সুবিধা মোটেও পর্যাপ্ত বলা যায় না। কর্মসংস্থান ছাড়া তাঁদের চাঁদাবাজি বা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা যাবে, এমনটি মনে হয় না।

শেরপুর জেলায় ৫২ জন হিজড়ার মধ্যে একজন স্নাতক পাস, দুজন স্নাতকে পড়ছেন এবং মাধ্যমিক পাস করেছেন তিনজন। সেখানে হিজড়ারা ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আশার কথা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হিজড়াদের আবাসনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার মধ্যে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্ত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে।

স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি এবং বেসরকারি সংগঠনগুলো আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে একটি জেলায় ৫২ জন হিজড়ার মধ্যে কর্মহীন ৩৫-৪০ জনকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা খুব কঠিন কাজ বলে মনে হয় না। আর এটা সম্ভব হলে শেরপুর জেলার পরিচিতি হতে পারে এমন একটি আদর্শ জেলা হিসেবে, যেখানকার তৃতীয় লিঙ্গের সব মানুষ সমাজের মূল স্রোতোধারার সঙ্গে যুক্ত।