Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারের 'শুদ্ধি' অভিযান

দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা সরকারের সাম্প্রতিক ‘অভিযান’ এখন সর্বমহলে আলোচনার বিষয়। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ একে শুদ্ধি অভিযান বলে দাবি করছেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিলেন যে উন্নয়নের নামে এত দিন দেশে অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন তথা ভয়াবহ দুর্নীতি ও সামাজিক অনাচার চলছিল। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন জরিপে অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কথা উঠে এলেও সরকার এত দিন আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। এখন দুর্নীতিতে সরকারের নাক ডুবে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। 

সম্প্রতি দলের এক সভায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের বাড়াবাড়িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি সরকারেরও প্রধান নির্বাহী—ক্ষোভ প্রকাশ করার পরই দল ও প্রশাসনে নড়াচড়া শুরু হয়ে যায়। প্রথমে কমিশন-বাণিজ্যের অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা রেজওয়ানুল হক ও গোলাম রাব্বানী সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। এর কদিন পরই বিভিন্ন স্থানে র‍্যাব দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধ এবং যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ, জি কে শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলমসহ অনেককে গ্রেপ্তার করে। 

সরকারের পক্ষ থকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ক্যাসিনো বাণিজ্য বৈধ নয়। তাহলে এই প্রশ্ন করা অযৌক্তিক নয় যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার নাকের ডগায় কীভাবে এ ধরনের ক্যাসিনো ব্যবসা চলতে পারল? এ ঘটনায় এটা পরিষ্কার হয়েছে যে আইন নিজের মতো করে চলেনি। চললে এত দিন তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারতেন না। এখন সরকার চাইছে বলেই তাঁরা ধরা পড়ছেন। আইনের শাসন কায়েম থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়। ক্যাসিনো পরিচালনা ও দুর্নীতির দায়ে যেসব ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক কর্তাব্যক্তির যোগাযোগ ও দহরম-মহরমের বিষয়গুলো আলোচিত হচ্ছে। 

র‍্যাবের অভিযানে ক্ষমতাসীন দল বা সহযোগী সংগঠনের কজন নেতা গ্রেপ্তার হলেন, কটি ক্যাসিনোর সরঞ্জাম জব্দ হলো, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এর পেছনের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়া। নেতারা মুখে যা-ই বলুন না কেন, রাজনীতি এখন অনেকের কাছে অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই একদা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সুহৃদ হয়ে যান। বিএনপির আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রীর ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিকে সরকারের অন্যতম প্রধান ঠিকাদার হিসেবে কাজ পেতেও কোনো সমস্যা হয় না। 

নিয়ম অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্রে যে কেউ কাজ পেতে পারেন। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার দায়ে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জি কে শামীম দাবি করেছেন, গণপূর্ত বিভাগের কাজ পেতে তিনি কোটি কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন। প্রতিটি কাজে ১০ শতাংশ হারে কমিশন দেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু এই ঘুষের টাকা শুধু কর্মকর্তাই পেয়েছেন, না ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক রাজনৈতিক নেতারাও ভাগ বসিয়েছেন, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। 

বাংলাদেশে সরকারি উন্নয়নকাজের মান যে অত্যন্ত খারাপ, তার প্রধান কারণ এই কমিশন বাণিজ্য। কোনো ঠিকাদার নিজের পকেট থেকে কমিশন দেন না; জনগণের করের অর্থে যে বরাদ্দ হয়, সেখান থেকেই তাঁরা এটি তুলে নেন। উন্নয়নকাজের নামে একশ্রেণির অসাধু রাজনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের মধ্যে যে অশুভ চক্র তৈরি হয়েছে, তঁাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে এ ধরনের অভিযান কোনো ফল দেবে না। এ জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। এই শুদ্ধি অভিযান কত দিন ও কত দূর চলতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।