Thank you for trying Sticky AMP!!

সাগরপথে রোহিঙ্গা পাচার

বেশ কিছুদিনের বিরতিতে সাগরপথে রোহিঙ্গা পাচার বেড়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১৫ মাসের বেশি সময় পার হলেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সমস্যার সুরাহা করতে পারেনি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরু করার দিনক্ষণ স্থির করলেও তা যে কার্যকর হবে, সেই নিশ্চয়তা নেই। আবার দুর্গত রোহিঙ্গাদের জীবনযাপনের ন্যূনতম সুবিধাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না নানা কারণে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার পরিমাণও কম।

মালয়েশিয়ায় পাচারকালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৬ দালালের আটক এবং ১০ নারীসহ ৩৩ রোহিঙ্গা উদ্ধারের ঘটনায় আমরা বিচলিত। আশঙ্কা, এবারের শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকার সুযোগটি কাজে লাগাতে মানব পাচারকারী চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। থাইল্যান্ডের উপকূলে গণকবর, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার নিখোঁজ থাকা ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা উদ্‌ঘাটনের পরে সাগরপথে মানুষ পাচার হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু গত ১৫ মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, মিয়ানমারে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তার কোনোটিরই কোনো সদুত্তর মেলেনি। এমনকি রোহিঙ্গাদের কেবল নির্দিষ্ট শিবিরে আবদ্ধ রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রয়াসও ভেস্তে যেতে বসেছে। গত প্রায় দেড় বছরে দেশের ১৩ জেলা থেকে ৫৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে বাস্তবে রোহিঙ্গাদের আর সরকারি শিবিরের ঘেরাটোপে আটকে রাখা যাচ্ছে না। তারা বেঁচে থাকার জন্য কিংবা উন্নত জীবনের জন্য সব ধরনের ঝুঁকি নিচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া চলে না যে নিবন্ধিত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে অনধিক তিন লাখ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজার ও টেকনাফে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রায় বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকারকে মনে রাখতে হবে যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা যে বহির্বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছি, এখন তারা বাংলাদেশ থেকে পাচার হতে থাকলে সেই সুনামই শুধু নষ্ট হবে না, সরকারকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো গেলে পাচার বন্ধ হতে পারে। গত মে মাসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় স্বীকার করা হয় যে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ওপর নজর রাখা ৯৯৭ জন পুলিশ সদস্যের পক্ষে অসম্ভব। তাই শিবিরগুলোতে সীমানাপ্রাচীর তৈরি, দুটি নতুন ব্যাটালিয়ন তৈরি এবং মানব পাচারকারীদের গ্রেপ্তারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কার্যক্ষেত্রে এর প্রতিফলন নেই।

১২ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত সমুদ্রের সীমান্তপথ রাতের আঁধারে আরও অরক্ষিত হয়ে পড়ে। সুতরাং শীত মৌসুমে উপকূলে সর্বাত্মক নজরদারি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।