Thank you for trying Sticky AMP!!

সাভার চামড়াশিল্প নগরী

গত সোমবার বেসরকারি সংস্থা এশিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘ট্যানারি শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সরকারি কর্মকর্তা ও চামড়া শিল্পমালিকদের মধ্যে যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, তাতে মনে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সমস্যা সমাধানের চেয়ে সমস্যা নিয়ে একে অপরের ওপর দোষ চাপাতেই বেশি আগ্রহী। সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরী কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েই গেছে।

বিসিক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে ট্যানারি থেকে কঠিন বর্জ্যসহ ক্রোমমিশ্রিত পানি সরাসরি মূল পাইপে ছাড়া হয়। ফলে পাইপলাইন ব্লক হয়ে নোংরা পানি ম্যানহোল দিয়ে উপচে পড়ে। এতে সিইটিপির ব্যাকটেরিয়া মরে যায়, যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) নেতাদের দাবি, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে বিসিক নিজেদের দায় অন্যদের ওপর চাপাচ্ছে। চীনের নিম্নমানের যন্ত্রপাতির কারণেই সিইটিপি নষ্ট হয়েছে। ট্যানারি থেকে সিইটিপিতে বর্জ্য নেওয়ার জন্য ৩৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দেওয়ার কথা থাকলেও ১৮ ইঞ্চির পাইপ দেওয়া হয়েছে।

হাজারীবাগে চামড়াশিল্পের পরিবেশগত অভিঘাত ও ক্ষতির কথা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। তারপরও সাভারের চামড়াশিল্প নগরী প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা খুবই হেলাফেলাভাবে নিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সাভার চামড়াশিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় শোধনাগার বা সিইটিপির সব ইউনিট এখনো প্রস্তুত হয়নি। এ জন্য প্রথমত বিসিকই দায়ী। কেননা এ রকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি দরকার, তারা তা মানেনি। এখন শিল্পমালিকদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন যে তঁারা কঠিন বর্জ্য সরাসরি পাইপে ছেড়ে দেওয়ায় পাইপ অকেজো হয়ে পড়েছে। কিন্তু কেন ৩৮ ইঞ্চির পাইপ ১৮ ইঞ্চিতে পরিণত হলো, কেন চীন থেকে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হলো সেসব প্রশ্নের উত্তর নেই। শিল্পনগরী তৈরি হওয়ার আগেই উদ্যোক্তাদের এখানে কারখানা স্থানান্তরের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।

বলা হয়েছিল, হাজারীবাগে কেন্দ্রীয় শোধনাগার নেই। নতুন শিল্পনগরীতে নতুন শোধনাগার থাকবে এবং সেখানে পরিবেশগত ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে হাজারীবাগে যেভাবে শিল্পবর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হতো, নতুন শিল্পনগরে তা হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে লাউ সেই কদু। আগে চামড়াশিল্পের জন্য বুড়িগঙ্গা ধ্বংস হয়েছে, এখন ধলেশ্বরী ধ্বংস হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে চামড়াশিল্প মালিকেরাও দায় একেবারে এড়াতে পারেন না। নিয়মকানুন মেনে শিল্প তৈরি করার উদাহরণ বাংলাদেশে খুবই কম। অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত, চামড়াশিল্পের পরিবেশগত ক্ষতি অনেক বেশি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো শিল্পের পরিবেশগত ঝুঁকি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা না গেলেও অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। ফলে এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের দায়দায়িত্ব রয়েছে।

সরকারের প্রথম দায়িত্ব হলো চামড়াশিল্প নগরীর অবকাঠামো ও পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, আইন ভেঙে কেউ পরিবেশ দূষণ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বিসিক কর্মকর্তারা শিল্পোদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন কোনো নজির দেখাতে পারেননি। আইন ভাঙা যেমন অন্যায়, তেমনি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াও অন্যায়।

গেল ঈদুল আজহার সময় যে পশুর চামড়া নিয়ে মহা কেলেঙ্কারি হলো, তার জন্য চামড়াশিল্পের মালিকেরা সাভারে স্থাপিত নতুন চামড়াশিল্প নগরীর অবকাঠামোগত সমস্যাকে দায়ী করেছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর পার হলেও সাভার চামড়াশিল্পের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) প্রস্তুত না হওয়া এবং কঠিন বর্জ্য ফেলার জায়গা বা ডাম্পিং ইয়ার্ডের কাজ শুরু না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। অতএব, পরস্পরকে দোষারোপের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে সরকার ও শিল্পমালিকদের উচিত হবে একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজে বের করা।