Thank you for trying Sticky AMP!!

স্টিফেন হকিংয়ের বিদায়

মটর নিউরন ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকেরা মাত্র দুই বছর বাঁচবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মানুষটি জগৎকে অবাক করে দিয়ে বেঁচে ছিলেন ৭৬ বছর এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সব শারীরিক অক্ষমতা জয় করে বিজ্ঞানসাধনা অব্যাহত রেখেছেন এবং মানবজাতিকে উপহার দিয়েছেন বিজ্ঞানের নতুন সব তত্ত্ব।

স্টিফেন হকিংয়ের জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে। কৈশোরে তিনি ভালো ছাত্র ছিলেন না। যখন তাঁর বয়স নয় বছর, তখন ক্লাসে তাঁর স্থান ছিল শেষ দিকের প্রথম। বাবা তাঁকে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়তে উদ্বুদ্ধ করলেও তিনি পদার্থবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নেন। পরে কেমব্রিজে শিক্ষকতা করেন। অদম্য সাধনা ও অধ্যবসায় দিয়ে হকিং নিজেকে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আইনস্টাইনের পর তাঁকেই সবচেয়ে প্রভাব সৃষ্টিকারী বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 এই মহাবিজ্ঞানীর দুটি অবিস্মরণীয় অবদানের একটি হলো ১৯৬৪ সালে রজার পেনরোজের সঙ্গে বিকিরণ আপেক্ষিকতার সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব। তাঁর আবিষ্কার হলো ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর শূন্য কিছু নয়, এর থেকেও বিকিরণ বেরিয়ে আসছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন হকিং বিকিরণ। একে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিওরি’র প্রবক্তাও স্টিফেন হকিং। তিনি মানবমণ্ডলীকে এই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যে কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনায় যেমন পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি হাজার হাজার বছর পর ফের মহাদুর্ঘটনায় পৃথিবী ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। অতএব, মানবজাতির উচিত হবে সেই ধ্বংসের আগে নতুন কোনো আশ্রয় খুঁজে নেওয়া।

শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও স্টিফেন হকিং পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন, তাঁর সেই বিখ্যাত যান্ত্রিক হুইলচেয়ারটি নিয়ে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং নবীনদের বিজ্ঞানচর্চায় আরও বেশি মনোযোগী হতে বলেছেন। বিভিন্ন সভা–সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি তাঁদের বিজ্ঞানের নতুন নতুন গবেষণার ফল সম্পর্কে জানিয়েছেন।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম–এ হকিং সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মহাবিশ্বের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন, যুক্তি, তথ্য ও তত্ত্বের নিরিখে। এই বই বিজ্ঞানী তো বটেই, সাধারণ পাঠকের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন ও বেবি ইউনিভার্সও তাঁর দুটি গুরুত্বপূর্ণ বই।

স্টিফেন হকিংয়ের সমস্ত আবিষ্কার ও তত্ত্ব মানবজাতির অমূল্য সম্পদ।

আমরা এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।