Thank you for trying Sticky AMP!!

স্টেডিয়ামের জায়গা উদ্ধার

রবীন্দ্রনাথের কালে উপেনরা ছিলেন, তাঁদের ‘দুই বিঘা জমি’ ছিল, সেই জমি দখল করা বাবুরাও ছিলেন। সময় বদলেছে। কিন্তু দিন বদলায়নি। একবিংশ শতকে সেই বাবুদের দাপট আরও বেড়েছে। তাঁরা সাধারণ দুর্বল মানুষের সম্পত্তি তো বটেই, এমনকি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিকেও উপেনের দুই বিঘা জমি মনে করে সমানে দখল করে চলেছেন।

অবস্থা দেখলে মনে হতে পারে, দেশে আইন-আদালত বলে কিছু নেই। গায়ের জোর অথবা বন্দুকের নলই যাবতীয় ক্ষমতার উৎস। এ দেশের বাস্তবতা হলো সরকারি সম্পত্তিতে একবার একটু খুঁটি গাড়তে পারলেই হলো, সেই খুঁটির জায়গায় দালান ওঠাতে সময় লাগে না। দেশের আইন এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থার ‘কল্যাণে’ বেদখল হওয়া এ ধরনের সম্পত্তির দখল ফিরে পাওয়া প্রায় অসম্ভব কাজে পরিণত হয়েছে।

এ অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার পৌর মেয়র ফখরুল আলম। তাঁর নেতৃত্বে সেখানকার শহীদ আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়ামের জায়গার ওপর গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করে অন্তত এক একর জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরুর আগেই স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি স্টেডিয়ামের জায়গা দখলে নিয়ে ধীরে ধীরে স্থাপনা নির্মাণ করতে শুরু করেছিলেন। অনেকে সেখানে বহুতল ভবনও নির্মাণ করে ফেলেছিলেন। তখন পৌর ও উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা করেও জায়গা দখলমুক্ত করতে
পারেনি। এ থেকে বোঝা যায়, দখলকারীদের হাত কত লম্বা ছিল। তবে পৌর প্রশাসনের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত তাঁদের উচ্ছেদ করা গেছে। সব স্থাপনা ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়েছে।

ভৈরব পৌরসভার এ কাজ দেশের অন্য এলাকার স্থানীয় সরকারভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রেরণা হতে পারে। দেশের হাজার হাজার সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি বেদখল হয়ে আছে। সেগুলো পুনরুদ্ধার করা গেলে তার প্রকৃত হকদার যারা, সেই জনগণই উপকৃত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারি নীতিনির্ধারকেরা যদি স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন, তাহলে কাজটি সহজেই সমাধা করা সম্ভব।

দখলদারদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে তাঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে আমলে নিয়ে সরকার যদি দখল হওয়া সম্পদ উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়, সেটি দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ বয়ে আনবে। এ জন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে। এটা নিশ্চিত, সরকারি সম্পত্তি পুনর্দখল করতে গেলেই দখলকারীরা বরাবরের মতো রাজনৈতিক পরিচয়কে সামনে এনে আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে সে সময় তাঁদের শুধুই ‘দখলদার’ হিসেবে বিবেচনায় রাখা উচিত হবে।