Thank you for trying Sticky AMP!!

স্থানীয় সরকারকাঠামো

সম্পাদকীয়

পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে যখন বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানির ঘটনা ঘটে চলেছে, তখন স্থানীয় সরকারের এই কাঠামোর করুণ চিত্র উঠে এসেছে গত রোববার আয়োজিত এক জাতীয় সংলাপে। সারা দেশে পৌরসভা আছে ৩২৯টি। এগুলোর মধ্যে ৪০টিতে ১০ থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া। ১ মাস থেকে ৫৯ মাস বেতন-ভাতা বকেয়া ১৭০টি পৌরসভায়। এর অর্থ, অধিকাংশ পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাই ঠিকমতো দিতে পারছে না। এই অবস্থায় পৌরসভাগুলোর কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত জনসেবা আশা করা যায় না।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ প্রকল্প আয়োজিত এ সংলাপে পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও উন্নয়নকর্মীরা আলোচনায় অংশ নেন। মন্ত্রী পৌরসভাগুলোকে আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেছেন, কর্মীদের ১২ মাসের বেতন দিতে না পারলে পরিষদ ভেঙে দিতে আইন সংশোধন করা হবে। অন্যদিকে পৌর মেয়ররা আয় বাড়াতে অবকাঠামোগত সুবিধা ও আইনি সুরক্ষার তাগিদ দিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা মাঠপর্যায়ে কাজে তদারকি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।

সংলাপে উত্থাপিত নিবন্ধে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রাতিষ্ঠানিক এবং আর্থিক দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধাগুলো চিহ্নিত, যেগুলোর মধ্যে আছে দেশের সমন্বয়হীন নগরায়ণপ্রক্রিয়া, অপরিকল্পিত ও নীতিনির্ধারণী কাঠামো এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকবলের অভাব। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেটপ্রক্রিয়া এবং প্রকল্প গ্রহণে সমন্বয় ও সংযোগহীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

এসব সমস্যা নীতিনির্ধারকদের অজানা নয়। কিন্তু পূর্বাপর সব সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর কাজ চলেছে গতানুগতিকভাবে। অন্যান্য স্থানীয় সরকার সংস্থার মতো পৌরসভাকেও তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে। মন্ত্রী মহোদয় এখন পৌরসভাগুলোকে আয় করে চলার কথা বলেছেন। কিন্তু কোন উৎস থেকে সেই আয় আসবে, তা বলছেন না। পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনগুলোকে কেন কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে? যেসব দেশে স্থানীয় সরকারকাঠামো শক্তিশালী, সেসব দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ কম।

আমাদের এখানে স্থানীয় সরকারের পরিধি বাড়লেও তাদের ক্ষমতা বাড়েনি। এর কারণ, উন্নয়ননীতি পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। প্রতিবছর পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা কিংবা জেলা পরিষদে উন্নয়নকাজে যে অর্থ ব্যয় হয়, তার ওপর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়েছে ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দারে। নিধিরাম সর্দার মার্কা স্থানীয় সরকার দিয়ে আর যা-ই হোক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে জনসেবা পৌঁছানো যায় না। তাই স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়িত করতে হলে উন্নয়ননীতিরও পরিবর্তন দরকার।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে আয় বাড়াতে বলেছেন; কিন্তু কী উপায়ে তা বাড়ানো সম্ভব, কীভাবে স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়িত করা যাবে, তা খোলাসা করেন না। কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়নের চাবিকাঠি যদি পুরোটাই নিজের হাতে রেখে দেয়, মানুষ টাকা থাকলেও স্থানীয় সরকার সংস্থাকে দেবেন না। তাই স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে ‘জনসেবার’ দায়িত্ব দিলে ক্ষমতাও দিতে হবে।