Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

আমাদের দেশে ইটভাটা মানেই হচ্ছে ধোঁয়া। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া যেমন পরিবেশ দূষিত করে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ফেলে মারাত্মক প্রভাব। চিকিৎসকদের মতে, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় মানুষের হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যালার্জি, ক্যানসারসহ নানা রোগ হতে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা এসব রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এ রকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শরীয়তপুরের বিভিন্ন ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের পাঁচ শতাধিক শিশুসন্তান।

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শরীয়তপুরে ছয়টি উপজেলায় ৫৪টি ইটভাটা রয়েছে। সেগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করেন। শ্রমিকদের অধিকাংশেরই বাড়ি জেলার বাইরে। তাঁরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকেন, বছরে সাত-আট মাস ইটভাটায় কাজ করেন। এ সময় তাঁরা পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যদের নিয়ে আসেন। তখন কাজের স্বার্থে ভাটার মালিকেরা ভাটার ভেতর তাঁদের থাকার জন্য কাঁচা ইট আর টিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে দেন। বর্তমানে এই ৫৪টি ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁদের পাঁচ শতাধিক শিশুসন্তান রয়েছে। ইটভাটার ধুলাবালু আর ধোঁয়ার মধ্যেই শিশুরা বড় হচ্ছে। ইটভাটার পরিবেশে যেখানে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্যই ঠিক থাকে না, সেখানে শিশুদের কথা তো বলাই বাহুল্য।

কিন্তু এই শিশুদের এভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে রাখা কি ঠিক হচ্ছে? এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে, ইটভাটার ভেতরে নয়, বরং শ্রমিকদের জন্য ইটভাটা থেকে দূরে থাকার ব্যবস্থা করা। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যা, শিশুদের দেখভালের সমস্যাসহ নানা কারণে হয়তো সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ইটভাটার শ্রমিকদের সন্তানেরা বেড়ে উঠছে।

শ্রমিকদের সন্তানদের বা শিশুশ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ইটভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ইটভাটা পরিবেশবান্ধব নয়। জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর কথা থাকলেও পোড়ানো হয় কাঠ। অনেক ইটভাটায় আবার প্লাস্টিক পোড়ানো হয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে লোকালয়ে, বিদ্যালয়ের পাশে ও কৃষিজমিতে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ছে।

ইট সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম ও অবকাঠামো তৈরির অতিপ্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ইট আমাদের লাগবে, কিন্তু তা উৎপাদন করতে হবে নিয়ম মেনে ও পরিবেশসম্মত উপায়ে। দেশের ইটভাটা আইনে হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, জিগজ্যাগ ক্লিন ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব ইটভাটা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। তবে এসব ভাটা নির্মাণ যেহেতু বেশ ব্যয়বহুল, তাই অনেকে এসব নির্মাণে উৎসাহী হন না। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। ইটভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।