Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ

শনিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণায় যে ১৯৫টি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩। ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের অবস্থান যথাক্রমে ১৪৫, ১৪৯ ও ১৫৪। তালিকায় শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের অবস্থান যথাক্রমে ৭১ ও ৭২। তালিকার শীর্ষে আছে ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ড।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক গবেষণায়ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার সাফল্যের কথা কমবেশি বলা হয়। স্বাধীনতার পরের কিংবা সত্তর ও আশির দশকের সঙ্গে তুলনা করলেও এটি বেশ অগ্রগতি বটে। কিন্তু আমাদের তো এখানে থেমে গেলে হবে না। গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজেস শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ভারতের স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। ১৯৯০ সালে যেখানে তাদের স্কোর ছিল ২৪.৭, ২০১৬ সালে সেখানে তাদের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪১.২।

ল্যানসেটের গবেষণায় বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের যে দেশগুলো ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে প্রাথমিকভাবে ভালো করেছে বা অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেছে, সে তালিকায় আছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস ও রুয়ান্ডা। বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অগ্রগতি আছে কিন্তু আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। সামনের করণীয় ঠিক করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যসচিব স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে ‘ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল’ তৈরির কাজ শুরু করার কথা বলেছেন। ১৭ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে এ ধরনের সেল কী ভূমিকা পালন করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সবার জন্য সবখানে’। প্রথমেই স্বীকার করতে হবে যে আমরা স্বাস্থ্যসেবা সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি। বর্তমান সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠাকে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দাবি করলেও এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ এর বাইরে রয়েছে। তাই আমরা মনে করি, সরকারের প্রথম কাজ হবে দেশের প্রত্যেক নারী-পুরুষ ও শিশুকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা। এরপর মানের প্রতিও জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্যও জরুরি। বাংলাদেশে এখন কেউ না খেয়ে মারা না গেলেও সবার কাছে পুষ্টিকর খাদ্য পৌঁছাচ্ছে, এ কথা বলা যাবে না। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমলেও অনেকে এখনো অপুষ্টির শিকার।

সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হলে প্রত্যেক নাগরিকের জীবনমানের উন্নয়নও জরুরি। যেখানে ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, সেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো অলীক কল্পনাই বটে। সরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে জনবল ও অবকাঠামো আছে, সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব নয়। ফলে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের অতিরিক্ত ভিড় লক্ষ করা যায়। এ অবস্থায় অবকাঠামোগত সুবিধার পাশাপাশি চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।

গেল শতকের শেষ দিকে ‘২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’ স্লোগানটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এরপর সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও স্বাস্থ্য খাতের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। বর্তমান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা ও সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করার যে প্রত্যয় রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।