Thank you for trying Sticky AMP!!

সড়কে ঝরল ৬৬ প্রাণ

সড়কপথে নানা উদ্যোগ আয়োজন সত্ত্বেও ঈদের ছুটির চার দিনে ৬৬টি জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদের সময় সড়ক নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি বা আতঙ্ক না ছড়াতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ রাখতে মন্ত্রণালয় সজাগ ছিল বলে তিনি তাঁর ফেসবুকে দাবি করেন। আমরা তাঁর সংবেদনশীলতায় আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চার দিনে শুধু মৃতের সংখ্যা গত ঈদের তুলনায় ১৫ জনের বেশি হওয়া প্রমাণ করে তাঁর মন্ত্রণালয়ের নেওয়া পদক্ষেপগুলো হতাহতের সংখ্যা কমাতে পারেনি। ৭২ ঘণ্টায় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৭৫ জন। আঘাত গুরুতর হওয়ায় এর প্রায় অর্ধেককে ভর্তি হতে হয়েছে। ঈদের আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় এতজন মানুষের মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

এটা ঠিক যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় যানজটে মানুষ বিপর্যস্ত হলেও এবার সার্বিকভাবে মানুষের ঘরে ফেরা অপেক্ষাকৃত স্বস্তিদায়ক ছিল। সুতরাং মন্ত্রণালয়কে খতিয়ে দেখতে হবে যে ঈদের ছুটিতে সংঘটিত দুর্ঘটনাগুলোর কারণ কি চালকদের বেপরোয়া যান চালনা, না সড়ক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি? গত বছর আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামার পর সরকার নতুন সড়ক আইন করেছিল, যাতে আইন অমান্যকারীদের শাস্তি বাড়ানো হয়েছিল। যদিও সরকার–সমর্থক পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা সেই আইনের বিরোধিতা করতেও দ্বিধা করেননি। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে হাইকোর্ট বিভাগের উদ্যোগগুলো ভুক্তভোগীদের মনে আশার সঞ্চার করেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, আদালতের আদেশগুলো কার্যকর করতে সরকারি তরফে তেমন উদ্যোগ নেই।

গত বছর ঈদের চার দিনে ১৭ জেলায় ৪৯ এবং এবারের ৬৬ জনের যে প্রাণ গেল, তাঁদের জীবনের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণী মূল্যায়ন হোক। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে সড়কে ১০ থেকে ১২ জনের প্রাণ যায়। আরও কত মানুষ আহত হয় এবং সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে, তার সঠিক পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে আমরা সরকারি সংস্থার তরফে সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবি জানাই।

মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে এবারের ঈদের ছুটিতে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ উদ্‌ঘাটন করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া। ঈদের সময় যাত্রীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে যানবাহনের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এসব যানবাহনের কত ভাগের ফিটনেস সনদ ছিল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া ডিজিটাল উপায়ে সড়কে যানবাহনের গতি তদারক সম্ভব। সড়কে বেশিবার যানবাহন নামানোর সঙ্গে মালিকের অতি মুনাফা লাভের সম্পর্ক থাকে। মহাসড়কে লেগুনা ও অটোরিকশার মতো হালকা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কথা। ঈদের সময় যাত্রীর চাপ থাকায় সেটিও সব ক্ষেত্রে রক্ষিত হয়নি। সব মিলিয়ে সড়কে যে বিশৃঙ্খলা চলে আসছিল, ঈদের ছুটিতে সেটি বেড়েছে বলেই ধারণা করি।

আমরা মনে করি, এবারের ঈদে সর্বোচ্চ সতর্কতা সত্ত্বেও কেন এত বেশি মানুষের প্রাণ ঝরল, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী সেই বিষয়টিকে অনুমানসিদ্ধ নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় যাচাই করেই তার পর্যবেক্ষণ দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করবেন। জনগণকে প্রকৃত অবস্থা জানানোর মধ্যে দুর্বলতার কিছু নেই। বরং এ ধরনের পদক্ষেপ সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে যে বিরূপ ও নেতিবাচক ধারণা আছে, সেসব নিরসনে সহায়ক হবে। কেবল ঈদের সময় নয়, বছরের প্রতিটি দিনই সড়কযাত্রা নিরাপদ হোক।