Thank you for trying Sticky AMP!!

হাওরে সূর্যমুখী স্বপ্ন

প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য হাকালুকি হাওরে এখন ঠিকরে পড়ছে। যদিও কৃষক অনেকটা দায়ে ঠেকে হরিদ্রাভ সূর্যমুখী ফুল ফুটিয়েছেন। কারণ, তাঁরা জানেন পাহাড়ি ঢল এসে তঁাদের ঘামঝরানো শ্রমকে পণ্ড করে দিতে পারে। তাই তাঁরা সূর্যমুখীতে ঝুঁকেছেন।

তবে একে শুধু হাওর এলাকার বিকল্প শস্য চাষ হিসেবেই জনপ্রিয় করা নয়, বরং সারা দেশেই এর ব্যাপকভিত্তিক চাষাবাদ হতে পারে। ইতিমধ্যে দেশের বহু এলাকায় কৃষকেরা উৎসাহভরে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় চলতি বছরেই প্রথম সূর্যমুখীর চাষাবাদ হলো। সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। চাষের উপকরণ দেওয়া হয়েছে কয়েকজন কৃষককে। এই পদক্ষেপ সাফল্য বয়ে এনেছে।

আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে সূর্যমুখী চাষ কোভিড-১৯ পরবর্তী স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থায় কৃষকের জীবনে এক নতুন স্বপ্নের ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে। তাই এ বিষয়কে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের আশু বিবেচ্য বিষয়ে পরিণত করতে হবে। সূর্যমুখী চাষের ফলে জাতি কীভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে, সেটা নতুন কোনো উদ্ভাবন নয়। ইতিমধ্যে বহু সময় ও সুযোগের অপচয় ঘটেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উচিত ঘুরে দাঁড়ানোর। তাদের অনুশোচনা করা উচিত যে কেন তারা সূর্যমুখী চাষকে ব্যাপক ভিত্তিতে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি বহুকাল ধরে তারা অনাদরে ফেলে রেখেছে। এটা তো সর্বতোভাবে সার্বক্ষণিকভাবে তাদের অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত।

এটা সত্যি একটা অস্বস্তির বিষয় যে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা দরকারি কাজেও কতটা উদাসীন থাকতে পারেন। এখানে তো বিশাল বিনিয়োগ বা ভর্তুকির কোনো বিষয় নেই। এটা এমন নয় যে এ ক্ষেত্রে কৃষকদের পাশে দাঁড়ালে কৃষকেরা তাদের হতাশ করবেন। বরং কৃষকদের সামান্য সহায়তা দিলে তঁারা দুহাত ভরে ফেরত দেবেন। কারণ, কৃষক এটা সহজে উৎপাদন করতে পারেন। আবার তারা নিশ্চিত সেই তুলনায় এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অত্যধিক। কৃষক ভালো ফলাবেন, ভালো দাম পাবেন। আর ভোক্তা পাবে সাশ্রয়ী দামে পর্যাপ্ত পুষ্টি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সূর্যমুখী থেকে উৎপাদিত তেলে প্রায় ৪০ ভাগ লিনোলিক অ্যাসিড থাকে, যা হার্টের জন্য অতি উত্তম।

বর্তমানে দেশে বছরজুড়ে লাখ লাখ টন পাম তেল আমদানি চলে। অথচ খোলাবাজারে কিনতে গেলে সয়াবিন ছাড়া পামের কোনো দেখা পাওয়া যায় না। স্পষ্টতই ভোজ্যতেল নিয়ে পর্দার আড়ালে একটা তেলেসমাতি–কাণ্ড চলছে। এর অবসানে সূর্যমুখী ফুলচাষিদের মুখে হাসি ফোটানো হতে পারে একটি শক্তিশালী সদুত্তর।