Thank you for trying Sticky AMP!!

হালদার ডলফিন ও মা মাছ

বাংলাদেশের পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী হালদা পৃথিবীর এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখানে রুইজাতীয় মিঠা পানির মাছ ডিম ছাড়ে। এটিই আমাদের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র। হালদার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য নদী, যেমন পদ্মা, মেঘনা, যমুনার সংযোগ নেই বলে এই নদীতে রুইজাতীয় মাছের জিনগত বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ অবিকৃত রয়েছে। তাই হালদাকে বলা হয় রুইজাতীয় মাছের অবিকৃত জিনগত মজুতের জলধারা। তা ছাড়া, এই নদীতে বাস ও বংশবিস্তার করে গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) পর্যবেক্ষণে এটি এখন বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন।

কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, মানুষের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের ফলে বছরের পর বছর ধরে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখতে হলে নদীর জলধারা ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক প্রতিবেশের অবক্ষয় রোধ করা জরুরি। কিন্তু এ বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব অত্যন্ত প্রকট। তা ছাড়া, স্বার্থান্বেষী মহলের প্রতিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার কার্যকর উদ্যোগ নেই। এ নদীর মোট দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার। তা ছাড়া, এর মধ্যে ৪০ কিলোমিটারজুড়েই আছে ১৭টি বালুমহাল, যেগুলোতে ড্রেজার ব্যবহার করে বালু তোলার বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চলে। এই নদী দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে অনেক ইঞ্জিনচালিত নৌকা, সেসব ইঞ্জিন চলে ডিজেলে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হালদা নদীতে ১৮টি গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত করে বলেছে, ডলফিনগুলো মারা গেছে বালু তোলার ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রপেলারের আঘাতে। এ ছাড়া সংযুক্ত খাল ও নালাগুলো দিয়ে বিভিন্ন এলাকার কলকারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানি হালদা নদীতে গিয়ে পড়ে।

সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হালদা নদীতে মাছ ধরার অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড। এখানে মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ এবং আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু মা মাছ শুধু যে ধরা হয়, তা-ই নয়, ডিমভরা অবস্থায়ও মা মাছ ধরা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের অবক্ষয়ের ফলে হালদা নদীতে উৎপন্ন রেণু পোনার পরিমাণ অনেক কমে গেছে, এর ওপর মা মাছ ধরার কারণে তা আরও কমে যাচ্ছে।

হালদা নদীর মা মাছ, বিপন্নপ্রায় প্রজাতির ডলফিন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গঠিত এক বিশেষজ্ঞ কমিটি কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেছে। যেমন এ নদীতে বালু তোলার ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল বন্ধ করতে হবে। আমরা খবর পেয়েছি, বালু তোলা এখন বন্ধ আছে, কিন্তু ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল বন্ধ হয়নি। অবিলম্বে তা বন্ধ করা দরকার। নির্বিচারে মা মাছ ধরা বন্ধ করাসহ বিশেষজ্ঞ কমিটির সব সুপারিশ বাস্তবায়নের জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হোক।