Thank you for trying Sticky AMP!!

হাসপাতালগুলো প্রস্তুত নয় কেন?

গত শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সাত ঘণ্টার ব্যবধানে বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্ভাব্য করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ইউনিটে দুজন রোগী মারা গেছেন। কিন্তু তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কি না, তা সেখানকার চিকিৎসকেরাও জানেন না। কারণ, ওই হাসপাতালে করোনা রোগী শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। উভয় রোগীর মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরের কাছে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাদের পরীক্ষার পরই শুধু নিশ্চিতভাবে জানা যাবে ওই দুই রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না।

আজকের সম্পাদকীয়র শুরুতেই আমরা এ ঘটনার কথা উল্লেখ করছি এই কারণে যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৈশ্বিক মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার দুই মাসের বেশি সময় পরও বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত করার ব্যবস্থা হতাশাব্যঞ্জক। বিদেশফেরত অধিকাংশ মানুষই ঢাকার নন, তাঁরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে গেছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাসহ আরও অজস্র মানুষ। তাঁদের কারও মধ্যে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দৃশ্যমান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পরীক্ষা করা এবং বিচ্ছিন্ন করে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপরেই নির্ভর করছে এই রোগের বিস্তার যথাসম্ভব সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়াসের সাফল্য। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি যে একেবারেই অপ্রতুল, তা বরিশালের ঘটনায় স্পষ্ট। শুধু বরিশাল নয়, ঢাকার বাইরে সারা দেশের অবস্থাও একই রকম হতাশাব্যঞ্জক।

শুধু করোনা রোগী শনাক্ত করা নয়, রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রস্তুতিও এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সীমিত পর্যায়ে রয়ে গেছে। শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক হাসপাতাল প্রস্তুত করার কাজ মাত্র শুরু হয়েছে বলা যায়। কারণ, একমাত্র কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। আরও যে সাতটি হাসপাতাল এই কাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে চারটি সরকারি হাসপাতাল এখনো করোনা রোগী চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হয়নি। বাকি তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের বেশি রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য নেই।

তাহলে এত দিন ধরে সরকারের লোকজন ক্রমাগত বলে আসছেন যে করোনা সংকট মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে—এই কথার কোনো সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং গতকালের প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সরকারি প্রস্তুতির যে চিত্র বর্ণিত হয়েছে, তাতে উদ্বেগ সৃষ্টির যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাজধানীর আউটার সার্কুলার রোডের রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের ড্রেনেজ লাইন সংস্কার ও ছাদ প্লাস্টার করার কাজ চলছে। অথচ এই হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর অন্যতম। এখনো সিমেন্ট-বালুর কাজ চলছে, রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার উপযোগী করতে আরও কত সময় লাগতে পারে, তা নিশ্চিত করে কে বলবে? নির্ধারিত অন্য হাসপাতালগুলোর অবস্থাও কমবেশি একই রকম: কোনোটিতে সংস্কারকাজ চলছে, কোনোটিতে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই, সামগ্রী-সরঞ্জাম নেই। আর করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত জরুরি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) এবং কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন। কিন্তু এই চার হাসপাতালের কোনোটিতেই এসব ব্যবস্থা নেই। একটিতে মাত্র আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে।

এই প্রস্তুতি নিয়ে করোনা মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আমরা অনেক সময় নষ্ট করেছি। আরও সময় নষ্ট করলে তার মাশুল হতে পারে অনেক বড় ও মর্মান্তিক।