Thank you for trying Sticky AMP!!

হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল

রোগ যা–ই হোক, রোগীমাত্রই দুর্দশা বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতির আগে, বিশেষ করে বিত্তহীন মানুষ যতটুকুই চিকিৎসাসেবা পাচ্ছিল, তার চরম অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে কোথায় গেলে ডাক্তার ও চিকিৎসা মিলবে, সেটা সারা দেশের মানুষের সামনে একটা জ্বলন্ত জিজ্ঞাসা। 

লকডাউন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তাই যেসব সাধারণ রোগী এত দিন ঘরে বসেছিলেন, তাঁরাও চিকিৎসক ও হাসপাতালের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন। কিন্তু এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘোরার ভোগান্তি কমেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটা বেড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ঘটনা জানা যাচ্ছে, যা আমাদের হতবিহ্বল করে দিচ্ছে। 

সমাজের বিভিন্ন স্তরের বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, যাঁরা কোভিড-১৯ রোগী নন, তাঁরাও সুচিকিৎসা না পেয়েই মারা যাচ্ছেন বলে তাঁদের দায়িত্বশীল স্বজনেরাই অভিযোগ করছেন। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও অনিয়ম ফুটে উঠেছে। মহামারির ১২ সপ্তাহের মধ্যেও কেবল দুর্নীতির কারণে ভেন্টিলেটর আমদানির কার্যাদেশ দিতে বিলম্ব ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরাও স্বাস্থ্য খাতের অভ্যন্তরে নানা অনিয়মের বিষয়ে সরব হচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হয়। 

হাসপাতালকেন্দ্রিক সরকারি সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সরকারি ও বেসরকারি নির্বিশেষে প্রতিটি হাসপাতালকে কোভিড এবং নন–কোভিডে ভাগ করতে বলা হয়েছে। সরকার আশা করছে, এর মাধ্যমে কোভিড রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাদান সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যথারীতি ঢিমেতালে চলছে। সরকারি হাসপাতালগুলোও এ ভাগ করার নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখিয়ে চলেছে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে মহামারিতে বেসরকারি হাসপাতালসহ যেকোনো সুবিধা বা স্থাপনা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়াই আছে। কিন্তু এ আইনের যথাযথ প্রয়োগে সরকারি নীতিনির্ধারকদের ঔদাসীন্য প্রতীয়মান হয়। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় আর্থিক সংকটের কথাও জানা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি পিপিই দিতে না পারার অপারগতা প্রকাশ করেছে। শুধু প্রকাশই নয়, তারা সেটা রীতিমতো সরকারি আদেশে উল্লেখ করেছে। 

সিলেটে আইসিইউ সুবিধা দিতে না পারার কারণে একজন মেধাবী চিকিৎসকের মৃত্যু সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল কোভিড-১৯ সংকটের সূচনাতেই। সেই সময়ে মাত্র ১০০ শয্যার শহীদ শামসুদ্দীন মেডিকেল কলেজকে কোভিড হাসপাতালে রূপ দেওয়া হয়েছিল। এরপর সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আলোচনা করে যাচ্ছে, কিন্তু হাসপাতাল বাড়েনি। সিলেটে কোভিড-১৯ রোগী ক্রমে বাড়ছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটির আর ধারণক্ষমতা নেই। কিন্তু সিলেটের প্রশাসন এ পর্যন্ত কোনো বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ শাখা চালু করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এখন ৬০০ শয্যার নর্থইস্ট হাসপাতালটি অধিগ্রহণের দর-কষাকষি চলছে। 

হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে রোগীদের ঘোরাঘুরির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, কোভিড ও নন–কোভিড কোনো রোগীকেই কোনো হাসপাতাল ফেরত দিতে পারবে না। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোভিড চিকিৎসা দিলে তারা তাদের মতো করেই বিল করবে। সেই বিল চিকিৎসাপ্রার্থীকে মেটাতে হবে। 

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের বিরাজমান বাস্তবতায় চিকিৎসা ব্যয়ের ব্যাপারে একটা হার নির্ধারণ করে দেওয়া দরকারি। আর রোগী ফেরতদানের ঘটনা যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেটা সংশ্লিষ্টদের আগে স্মরণ করিয়ে দেওয়া জরুরি। মুখপাত্রটি বলেছেন, তাঁরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু সেটা আর কবে মানুষ দেখবে, তার উত্তর কারও জানা নেই। 

এ অনিশ্চয়তা দূর করতে হলে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।