Thank you for trying Sticky AMP!!

৩৬তম বিসিএস

প্রথম আলোরপ্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ৩৭ মাস আগে। প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি), লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ হতে সময় লেগেছে আড়াই বছর। সাড়ে আট মাস আগে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরির জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুপারিশ করলেও চাকরিতে যোগদানের গেজেট হয়নি। ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বহু পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ এসব পরীক্ষার্থী চাকরির পরীক্ষার সব ধাপ অতিক্রম করে এসেছেন।

উল্লেখ্য, ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৫ সালের ৩১ মে। ২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন। পরের বছরের সেপ্টেম্বরে লিখিত পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয় ২০১৭ সালের জুনে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ২ হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।  বর্তমানে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, তার সঙ্গেও এই গেজেট বিজ্ঞপ্তির কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, সংস্কার আন্দোলন হচ্ছে ভবিষ্যতে যাঁরা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের জন্য। ইতিমধ্যে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা আগের নিয়মেই পদায়িত হবেন। এ ছাড়া কোটা সংস্কার নিয়ে সরকার যে স্ববিরোধী নীতি নিয়েছে, তাতে খুব তাড়াতাড়ি এর সুরাহা হবে, তা আশা করা যায় না।

পিএসসি যখন ৪০তম বিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনো ৩৬তম বিসিএসে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের পদায়নের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া শুধু দুঃখজনক নয়, উদ্বেগজনকও। নীতিনির্ধারকেরা মুখে ডিজিটাল বা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার কথা বললেও আমাদের সরকারি প্রশাসন চলছে বিপরীত ধারায়। একে শম্বুকগতি বললেও কম বলা হয়।

আরও উৎকণ্ঠার খবর হলো, চলতি বছরই ৩৮ ও ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষা হবে। সে ক্ষেত্রে চার-পাঁচটি বিসিএস পরীক্ষার জট লেগে যাচ্ছে। আমরা এত দিন শিক্ষাঙ্গনে সেশনজট ও আদালতে মামলাজটের কথা শুনে এসেছি। কিন্তু এখন জনপ্রশাসন বিসিএস পরীক্ষায় পদায়ন করতেও অহেতুক জট তৈরি করে চলেছে। সাধারণত একটি বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার সার্ভিসে দুই থেকে আড়াই হাজার প্রার্থী চাকরির সুযোগ পান। এ ছাড়া নন–ক্যাডার পদেও তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যদিও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই থেকে বেড়ে চার লাখে উন্নীত হয়েছে।

 অতীতে দেখা গেছে, বিসিএস উত্তীর্ণ হওয়ার পরও অনেকের পদায়ন আটকে দেওয়া হয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কোনো চাকরি প্রার্থীর গায়ে রাজনৈতিক মোড়ক পরিয়ে পদায়ন না করার যে অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেটি রহিত হওয়া প্রয়োজন। ছাত্রজীবনে যে কেউ দলীয় রাজনীতি বা ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, সেটিকে হাতিয়ার করে কাউকে রাষ্ট্রবিরোধী বা অপর পক্ষের লোক হিসেবে চিহ্নিত করা  কাম্য হতে পারে না।  

পিএসসির চেয়ারম্যান বলেছেন, বর্তমান কাঠামোয় দুই-আড়াই বছরের কম সময়ে কোনো বিসিএস পরীক্ষা শেষ করা যায় না। প্রয়োজনে কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। পরীক্ষার নামে যদি তরুণদের জীবন থেকে দুই-তিন বছর ঝরে যায়, সেটি যেমন তাঁদের বড় ধরনের ক্ষতি, তেমনি জাতিরও বিরাট অপচয়। যত দ্রুত পরীক্ষা হবে, ফল প্রকাশ পাবে, তত দ্রুত তাঁরা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবেন। সরকার শিক্ষাঙ্গনের সেশনজট কিছুটা কমালেও বিসিএসের পরীক্ষাজট রয়েই গেছে।

অবিলম্বে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের চাকরিতে যোগদানের পথ উন্মুক্ত করা হোক।