Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

সরকারের কি কিছুই করার নেই

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও সক্রিয়তার বিষয়টি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ফেসবুকে একপ্রকার প্রকাশ্যেই অবৈধভাবে কিডনি বেচাকেনার হাট বসে গেছে, সে ব্যাপারে অনেকটাই নির্বিকার তারা। দুই থেকে আড়াই শ ফেসবুক গ্রুপ খুলে প্রতারণামূলক এ ব্যবসা চালানো হচ্ছে।

সেখানে কিডনি ক্রেতা ও বিক্রেতাকে কিডনি দর-কষাকষিও করতে দেখা যায়। গ্রুপগুলোতে আট-দশ লাখের সম্পৃক্ততা দেখা গেছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে কী পরিমাণ মানুষ কিডনি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কারও অজানা নয় এবং কিডনি বেচাকেনা বন্ধে তাদের কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেই। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

দেশের আইন অনুসারে শুধু নিকটাত্মীয়ের দেওয়া কিডনিই প্রতিস্থাপন করা যায়। এখন দেশের কিডনির চাহিদা নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে পূরণ করাও সম্ভব নয়। দেশে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন দরকার। অথচ দেশের হাসপাতালগুলোতে বছরে ৫০০ কিডনিও প্রতিস্থাপন করা হয় না। সচ্ছল মানুষেরা দেশের বাইরে, বিশেষত ভারতে গিয়ে সে কাজটি করছেন।

এর জন্য কিডনিদাতা খুঁজে বের করা, তাঁকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, তঁার পাসপোর্ট-ভিসা করা এবং দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া, বিদেশে কিডনিদাতাকে দেখভাল করার পুরো প্রক্রিয়ার জন্য গড়ে উঠেছে কয়েক স্তরের দালাল চক্র। প্রভাবশালী ব্যক্তি, হাসপাতাল ব্যবস্থাপকসহ আরও অনেক মানুষ নিয়ে এ চক্র গড়ে উঠেছে। কিডনিদাতা হিসেবে খুঁজে বের করা হয় দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির মানুষকে। যার কারণে কিডনি বিক্রির পুরো টাকাটাও তাঁদের দেওয়া হয় না। দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে কিডনি হারিয়ে উল্টো প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয় তঁাদের।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা কিডনি বেচাকেনার জন্য রীতিমতো কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। যে উপজেলার পথ দিয়ে হাঁটলেই কিডনি দিয়েছেন, এমন লোকের দেখা মেলে হামেশা। যাঁরা কিডনি দিচ্ছেন, তঁারাই আবার কিডনি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। কিডনি দিলে স্বাস্থ্যগত কোনো ধরনের সমস্যা হয় না, মানুষকে এমন প্রলুব্ধ করতে তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা পুলিশ নানা সময় এ নিয়ে তৎপরতা দেখালেও কিডনি বেচাকেনা বন্ধ তো হয়নি, বরং আরও বেড়েছে। এখন পার্শ্ববর্তী পাঁচবিবি উপজেলাতেও সেই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফেসবুকের কারণে এ ব্যবসা এখন আর জয়পুরহাটে সীমাবদ্ধ নেই। গাইবান্ধা, বগুড়া, কুড়িগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলার মানুষও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি বলছেন, পুলিশের সাইবার ইউনিট চাইলেই ফেসবুক গ্রুপগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। গোটা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও কোনো কঠিন কাজ নয়। কিন্তু তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে আছে। এমনকি পুলিশের অনেক সদস্যও এসব চক্র থেকে নিজেদের বা স্বজনদের জন্য কিডনি কেনেন।

২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এ–সংক্রান্ত মাত্র ১৫টি মামলা হয়েছে, সেগুলোর একটিরও বিচার হয়নি। এসব মামলার পুলিশি প্রতিবেদনও গৎবাঁধা। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও একই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ২০১৯ সালে হাইকোর্টের একটি রায়ে কিডনিদাতার পরিধি বাড়াতে আইন পরিবর্তন, কিডনি বেচাকেনা বন্ধে একটি প্রত্যয়ন বোর্ড গঠনসহ কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল।

তার কিছুই কর্ণপাত করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে সরকার কিডনি বেচাকেনাকেই কি উৎসাহিত করছে না? যার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কিডনি প্রতিস্থাপনে এ অরাজকতা বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে একটি সুস্পষ্ট আইনি কাঠামো গঠন করা হোক। সেই আইন অনুসারে কিডনি প্রতিস্থাপন এবং সেটি তদারকির জন্য একটি জাতীয় কমিটিও গঠন করা যেতে পারে। আমরা এ নিয়ে সরকারের উদাসীনতার অবসান চাই।