Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

গাছ কেটে দোকান বসানোর কুবুদ্ধি কেন

চমৎকার। আশপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানঘরের দোকানিরা গাছের গোড়ায় ময়লা ফেলছেন। এই অজুহাতে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী আকাশমণি, শিলকড়ই, মেহগনি, গামারি, রেইনট্রিসহ ৭৭টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাছ কেটে সেখানে দোকানঘর তুলবে। তাতে নাকি জেলা পরিষদের আয়রোজগার বাড়বে।

হবিগঞ্জ থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, এই গাছগুলো ঘিরে বিকেল হলেই হরেক রকম পাখির আনাগোনা হয়। পানকৌড়ি, শালিক, কোকিল, চড়ুইসহ নানা প্রজাতির পাখির মিলনমেলা বসে। পাখির কলরব ও কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা থাকে জমজমাট।

কিন্তু এসব কোনো কিছুই জেলা পরিষদ গ্রাহ্য করছে না। তারা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে গাছ কাটার দরপত্র আহ্বান করেছে। দু-এক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে এসব গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হবে।

আচ্ছা, হবিগঞ্জ শহর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব কার? পৌরসভার কাজটা কী? ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটগুলো বসার অনুমতি দিয়েছে কোন কর্তৃপক্ষ? স্থানীয় সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা কী করছেন? প্রশাসনই–বা কী করে? জেলা পরিষদ কর্মকর্তার বক্তব্য, গাছ কাটার এই যজ্ঞে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যুক্ততা আছে। বাহ্! একটা জেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি প্রতিনিধি, পরিবেশের অভিভাবক সবাই বৃক্ষনিধনে হাত মিলিয়েছেন।

প্রশ্ন ওঠে, ময়লা ফেলা বন্ধে জেলা পরিষদের ঠিক কী উদ্যোগ আছে? তারা কি কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে? আপস-মীমাংসার চেষ্টা করেছে? ব্যর্থ হয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দোকানিদের সতর্ক করেছে? যত দূর জানা যাচ্ছে, এর কোনো কিছুই জেলা পরিষদ করেনি। তারা বরং বলার চেষ্টা করছে যে সরকার তাদের আয় বাড়াতে বলছে। গাছগুলো কেটে ফেলে কয়েকটি দোকান বসালে তাদের আয় বাড়ে।

অথচ আর সব জেলা পরিষদের মতো হবিগঞ্জ জেলা পরিষদেরও কিছু দায়িত্ব আছে, কিছু সম্পদও আছে। জেলা পরিষদের ১২ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় কাজের একটি হলো বৃক্ষরোপণ ও এর সংরক্ষণ। বোঝাই যাচ্ছে তারা উল্টো পথে হাঁটছে। এর বাইরেও তাদের জনকল্যাণমূলক আরও অনেক কিছু করার কথা। যেমন খেলার মাঠ, পাঠাগার, জাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, এসব কোনো কাজে পরিষদের আগ্রহই নেই। ২০০৭ সালে চালু হওয়া জাদুঘরের কপাট বন্ধ হয়ে আছে বহু বছর। এক মিলনায়তন ও ডাকবাংলোর মোটামুটি রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া পরিষদের তেমন কোনো কাজ দৃশ্যমান নয়। জেলা পরিষদ কি অন্য কোনো উৎস থেকে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছে?

প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে যে উন্নয়ন, তা কখনো টেকসই হতে পারে না। আর জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পরিবেশের প্রতি এমন গা-ছাড়া ভাব সত্যিই মর্মান্তিক। কারণ, গাছ কাটা কোনো সমাধান হতে পারে না।