Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

স্পারসোকে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করুন

যোগাযোগ, দুর্যোগ মোকাবিলা, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষার মতো বিষয়ে মহাকাশ গবেষণার গুরুত্ব সারা বিশ্বে এখন অনস্বীকার্য। উন্নত দেশগুলো মহাকাশকে তাদের কৌশলগত পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মহাকাশ এখনো আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। ৪২ বছর আগে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) যাত্রা শুরু হলেও এটি এখন পর্যন্ত নামেই মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হয়ে রয়েছে।

্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, স্পারসো জাতীয় মহাকাশ সংস্থা হলেও দেশের প্রথম ও একমাত্র স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের সঙ্গে স্পারসোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কেননা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা হতে হলে নিজস্ব যে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি প্রোগ্রাম থাকতে হয়, তা স্পারসোতে নেই।

এ ছাড়া এই সংস্থার মহাকাশ উৎক্ষেপণ স্টেশন, কক্ষপথ, নিজস্ব স্যাটেলাইট এবং এ-সংক্রান্ত প্রযুক্তি–সম্পর্কিত গবেষণাগারও নেই। বলতে গেলে, বিদেশি অনুদানে একটি গ্রাউন্ড স্টেশন ছাড়া মহাকাশ প্রযুক্তির অবকাঠামো নেই প্রতিষ্ঠানটির।

স্পারসোর মতো গবেষণা সংস্থা পরিচালনার জন্য যে ধরনের জনবল ও বিনিয়োগ দরকার, তারও ঘাটতি রয়েছে। বিজ্ঞানীর সংকটে সংস্থাটি ধুঁকছে। ৬৩ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর জায়গায় বর্তমানে মাত্র ২৩ জন কর্মরত।

তাঁদের দুজন আবার শিক্ষাকালীন ছুটিতে। অন্য ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় লোকবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। জনবলসংকটে স্পারসোর বেশির ভাগ কারিগরি বিভাগ নামমাত্র চালু আছে। কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একাধিক বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বিশেষায়িত এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে বিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, মহাকাশ বিষয়ে যাঁদের তেমন কোনো জ্ঞান ও ধারণা নেই।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান হলেও গবেষণায় স্পারসোর অবদান সামান্য। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটি মোট ১১৭টি গবেষণা করেছে। সংস্থাটিতে ১৬টি বিভাগ রয়েছে। সেই হিসাব করলে গড়ে একেকটি বিভাগ বছরে একটি করে গবেষণা করেছে। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত গবেষণা না হওয়ার পেছনে দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতির সঙ্গে যথেষ্ট ও পরিকল্পিত বরাদ্দ না থাকাটাও দায়ী।

স্পারসোকে গতিশীল করতে ২০২০ সালে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যেই দুটি স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন এবং দেশের উপযোগী ভূপর্যবেক্ষণ উপগ্রহের উন্নয়ন ও কক্ষপথে স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি থেকে দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাব এখনো পাস হয়নি। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার যখন এই দশা, তখন মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মহাকাশ অর্থনীতি এখন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে এর আকার ৩৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। বাস্তব জীবনের সঙ্গে ডিজিটাল জীবনেও আমাদের বসবাস।

টেলিভিশন দেখা, স্মার্টফোনের ব্যবহার কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন বিল প্রদানসহ নানা কাজে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন শতকোটি মানুষ স্যাটেলাইট সেবা নেয়। ২০২২ সালের শুরুতে কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজারের ওপরে। সামনের দিনগুলোয় মহাকাশ অর্থনীতি আরও বড় ও শক্তিশালী হবে। কিন্তু মহাকাশ অর্থনীতিতে আমাদের অবদান নেই বললেই চলে।

আমাদের নীতিনির্ধারকদের মহাকাশ গবেষণার গুরুত্ব সবার আগে অনুধাবন করতে হবে। স্পারসোর মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে অকেজো রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ কিংবা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা কতটুকু সম্ভব?

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা মাথায় রেখে স্পারসোকে সত্যিকারের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় পরিণত করা জরুরি। এ জন্য স্পারসোর নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যেমন জরুরি, একইভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। স্পারসোকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।