Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

সরকারের ঘুম ভাঙুক, গাফিলতির শাস্তি হোক

পৃথিবীর আর কোনো দেশ কি আছে, যেখানে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত এমন মুড়ি-মুড়কির মতো সহজলভ্য? তা-ও আবার যদি সেই দেশ হয় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং সরকার দাবি করে যে দেশটি অচিরেই স্মার্ট বাংলাদেশ হতে চলেছে?

প্রথম আলোর খবর বলছে, স্মার্ট কার্ডের তথ্য ‘বেহাত’ হয়ে গেছে। চাইলেই এই তথ্য টেলিগ্রাম চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে। ওই চ্যানেলে ঢুকে
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিলেই ব্যক্তিগত সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

এর আগে গত জুলাই মাসে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন থেকে ‘লাখ লাখ’ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইসির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অনেকে নিজেরা আলাদা পোর্টাল করছে। ওই পোর্টালগুলো যথেষ্ট সুরক্ষিত নয়। সেখান থেকেই ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হতে পারে। আগেও এমন হয়েছে।

কী চমৎকার! বোঝা গেল, এই দেশে যেসব প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা দেওয়ার কথা, তাদের সবার অবস্থা ঘুমকাতুরে নৈশপ্রহরীর মতো। দরজা খুলে রেখে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বাড়ি পাহারা দেয়। মুখে বলছি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ফেলেছি, এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে।

কিন্তু আমাদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যে আসলে ওপর দিকে ফিটফাট, নিচের দিকে সদরঘাট, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের মানুষ এখনো ব্যক্তিগত তথ্য হাতছাড়া হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবহিত নন। ফলে কর্তৃপক্ষেরও কোনো হেলদোল নেই। তথ্য বেহাত হওয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো ‘আইডেন্টিটি থেফট’, মানে পরিচয় চুরি যাওয়া। এতে করে যে ব্যক্তির পরিচয় চুরি যাচ্ছে, তিনি আর্থিক লেনদেন করতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে ব্যাংকে তাঁর জমা টাকা হাতিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে তিনি জমি কেনাবেচায় জালিয়াতির ঝুঁকিতে পর্যন্ত পড়তে পারেন।

তথ্য বেহাতের কারণে কাউকে কখনো জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানা যায়নি। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের সার্ভার থেকে তথ্য হাতছাড়া হওয়ার পর আমরা বিডি সার্টকে নানা উদ্যোগ নিতে দেখলাম। দু-চার দিন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ডানে-বাঁয়ে অনেক কথা বললেন। তারপর আর কোনো আওয়াজ নেই। অথচ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব জাতীয় নির্বাচন কমিশনের।

আইনে আছে, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কমিশনের কাছে সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে এবং কমিশন তথ্য-উপাত্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করবে। যত দূর জানা যাচ্ছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সক্ষম কি না, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে না।

ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দিতে চায়, এমন দেশগুলোয় সরকারের বাইরে স্বতন্ত্র একটি সংস্থা তথ্য বেহাত হলে বিচার-আচার করে। আমাদের দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি আছে, কিন্তু এটি সরকারি লোকজনে ভরা। কে তাহলে কার বিচার করবে?

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের তথ্য ফাঁস হচ্ছে, এমন তথ্য প্রকাশ করেছিলেন একজন বিদেশি নাগরিক একটি বিদেশি পত্রিকার কাছে। বিডি সার্টকে বারবার ই-মেইল দেওয়ার পরও সাড়া না পেয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিষয়টি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক হওয়ায় বেশ একটা শোরগোল অন্তত আমরা শুনেছিলাম। এ দফায় তা-ও নেই। আমাদের তথ্য বেহাত হওয়া নিয়ে সরকারের আদৌ কোনো মাথাব্যথা আছে কি?