Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত কেন

বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মাতৃভূমির প্রতি তাঁদের প্রেম, দায়বোধ, সাহসিকতা ও অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন এ রাষ্ট্র। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও এ রাষ্ট্রের দায় আছে।

দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সম্মানজনক ভাতা নির্ধারণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ এটি। সেখানে যুক্ত হয়েছে বীর নিবাস আবাসন প্রকল্প। এর মাধ্যমে সারা দেশে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একতলাবিশিষ্ট আবাসন করে দেওয়া হচ্ছে।

তবে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় বীর নিবাস বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বঞ্চিত করে একাধিক বাড়ির মালিক, বহুতল ভবনের মালিক ও সচ্ছল ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, হরিরামপুর উপজেলায় ৩৯ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের নামে বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। বীর নিবাসের সুবিধাভোগী কারা হবেন, তা নির্বাচনের কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।

কিন্তু হরিরামপুরে বীর নিবাসের জন্য আবেদন করেও বাড়ি পাননি এমন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার দেখা মেলে। অথচ সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইও করা হয়। বঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য, বীর নিবাস যাঁরা বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের কেউ সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা, কেউ বিত্তশালী। অনেকে জমিজমার মালিক। অনেকের পরিবারের একাধিক সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরিও পেয়েছেন। এ ছাড়া কানাডা, ইতালি ও আমেরিকায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন, এমন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারও রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় বীর নিবাসের আওতায় ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হবে। ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর।

গত ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছি। প্রকল্পের বাড়ি বানানো ও বরাদ্দে কেউ কোনো অনিয়ম করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হরিরামপুরে বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করা হোক। সেখানে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা যাতে বাড়ি বরাদ্দ পান, সেটি নিশ্চিত করা হবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা। বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দের তালিকা থেকে অসহায়, দুস্থ ও অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাদ পড়া নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আগেও প্রতিবেদন হয়েছে। আমরা আশা করব, এ নিয়ে যে অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা হচ্ছে, মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।