Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

যমুনা রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিন

পত্রিকার পাতা খুলে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে আমরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি নেতাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার শুনে বা দেখে অভ্যস্ত। জাতীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই দুই পক্ষ সহমত প্রকাশ করতে না পারলেও যমুনা নদী থেকে তারা মিলেমিশে বালু লুট করে চলেছে।

প্রথম আলোর ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধির প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, ধুনট উপজেলা যুবলীগ ও বিএনপি নেতারা যমুনা নদী থেকে বালু তুলছেন, যদিও যমুনা থেকে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ বেআইনি। নির্বিচার বালু উত্তোলনের কারণে সৃষ্ট ভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ভাঙন রোধে দফায় দফায় নির্মাণ করা হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

২০১৭ সালে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বুবাড়ি গ্রাম থেকে শহড়াবাড়ি গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন রোধে ডান তীর সংরক্ষণের কাজ করেছে। এতে ফলও পাওয়া গেছে। এলাকায় বড় ধরনের ভাঙন দেখা যায়নি।

কিন্তু সম্প্রতি উপজেলা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন ও গোঁসাইবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি রফিক কাজী মিলে বালু তোলা শুরু করেছেন। নির্বিঘ্নে এ কাজ চালানোর জন্য বিএনপি ও যুবলীগের নেতাদের সমন্বয়ে ২০ সদস্যের সমিতিও গঠন করা হয়েছে।

প্রতিদিন রাত তিনটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত খননযন্ত্র ও বাল্কহেড দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে ভাঙনের মুখে পড়েছে শহড়াবাড়ি, বানিয়াজান স্পার, তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও জেগে ওঠা চরের কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি খননযন্ত্র দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর থেকে বালু তোলা হয় এবং বাল্কহেড দিয়ে এ বালু নেওয়া হয় সারিয়াকান্দি ও কাজীপুরে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরেজমিনে বালু তোলার কাজ করেন বিএনপির নেতা এবং বালু তুলতে যাতে বাধা দেওয়া না হয়, সে জন্য প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেন যুবলীগ নেতা। তাঁরা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছেন। আর কীভাবে প্রশাসন ম্যানেজ করা হয়, তা অনুমান করা কঠিন নয়।

এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেছেন, ‘বালু তোলা বন্ধ করতে আগে কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। নতুন করে কেউ বালু তুললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ নদী থেকে প্রতিদিন বালু তোলার ছবিও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তারপরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিল না কেন, সে বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা নেই।

সরকারের অনুমতি ছাড়া নদী থেকে বালু তোলা ফৌজদারি অপরাধ। অথচ যমুনা, মেঘনাসহ অনেক নদী থেকে বালুখেকোরা নির্বিচার বালু তুলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নদী ও বসতি ক্ষতি করে বালু তোলার ঘটনা প্রশাসনকে জানাতে হবে কেন? তারা কি দেখতে পায় না? যমুনার ধুনট এলাকায় বালু উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নদী ও নদীতীরের প্রতিবেশ রক্ষা করতে হলে এখনই বালু তোলা বন্ধ করা হোক।