Thank you for trying Sticky AMP!!

বর্ষায় বিপদ আরও বাড়তে পারে

একসময় মনে করা হতো ডেঙ্গু বর্ষাকালের অসুখ। এখন শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা-নির্বিশেষে সব ঋতুতেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মে মাসে দুজন। আর জুন মাসের প্রথম আট দিনে আটজনের মৃত্যু হলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে মোট ৫০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার ২ হাজার ১১৯ জন এবং ৭৩৫ জন ঢাকার বাইরের।

অর্থাৎ ঢাকাতেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের পর গত দুই দিনে ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি বাসাবাড়ি, আঙিনাসহ নানা স্থানে জমে থাকার সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাস যেমন তার স্বভাব পাল্টাচ্ছে, তেমনি পাল্টাচ্ছে এডিস মশাও। এর অন্যতম কারণ প্রায় সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণকাজের জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকা। ফলে এডিস মশা প্রজননের জন্য উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে। বর্ষাকালে বিপদটা আরও বাড়তে পারে। 

ডেঙ্গু রোধে দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রাক্‌-প্রতিরোধ ও উত্তর-প্রতিরোধ। প্রথমত, ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করা। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা বারান্দায় পানি জমে না থাকে। এ বিষয়ে নাগরিক ও সিটি করপোরেশন উভয়েরই দায়িত্ব আছে। নাগরিকদের মনে রাখতে হবে, একজনের অবহেলা অনেকের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো গণসচেতনতা তৈরি করবে, মশা মারার ওষুধ ছিটাবে, প্রয়োজনে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। 

গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, তাতে মশা মরে না। যে ওষুধে মশা মরবে, সেটাই ছিটাতে হবে। চলতি বছর আগেভাগে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। ফলে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রেও সবাইকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। অনেকে জ্বর হলে ‘দেখি দেখছি’ বলে সময়ক্ষেপণ করেন, যাতে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। এ সময় জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়।

ঢাকা শহরের সব এলাকায় সমানভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে না। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগীই যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। এর অর্থ ওইখানে এডিসের প্রাদুর্ভাব বেশি। সিটি করপোরেশনের উচিত হবে উপদ্রুত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। ঢাকার বাইরে যেসব এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, সেখানেও জোরদার কর্মসূচি নিতে হবে।  

সামনে বর্ষা মৌসুম। এই সময়ে বৃষ্টির পানি যাতে বেশিক্ষণ কোথাও জমে থাকতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত পানি সরিয়ে ফেলতে পারলে মশা জন্ম নিতে পারবে না। যেহেতু এডিস মশা থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, সেহেতু আমাদের প্রধান কর্তব্য হবে এর প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করা। এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হন। আবার আক্রান্ত হলেও যথাসময়ে তাঁকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাফিলতির কোনো অবকাশ নেই। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে সমন্বিত জাতীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করা জরুরি।