Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

পরীক্ষক বাছাইয়ে পিএসসির সতর্কতা জরুরি

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ফি বছর একটি করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিলেও সেটি সফল হয়নি। তাদের এ উদ্যোগকে করোনা মহামারি যতটা না বাধাগ্রস্ত করেছে, তার চেয়ে বেশি করেছে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের একাংশের অবহেলা, অমনোযোগ ও উদাসীনতা।

২২ আগস্ট প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর। কিন্তু ৯ মাস পরও পরীক্ষার ফল প্রকাশ আটকে আছে পরীক্ষকদের দায়িত্বহীনতার কারণে।

পিএসসির অনুসন্ধানে ৩১৮ জন পরীক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিসিএস পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রধানত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের।

সরকারি কর্মকর্তারাও কিছু খাতা মূল্যায়ন করে থাকেন, যদিও তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু ৪১তম বিসিএসের লিখিত খাতা মূল্যায়নে যেসব গুরুতর বিচ্যুতি পাওয়া গেছে, তা কেবল উদ্বেগজনক নয়; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চরম দায়িত্বহীনতার উদাহরণও। খাতায় দেখা গেছে, পরীক্ষক অনেক প্রশ্নের উত্তরে নম্বর দেননি; নম্বর দিলেও সেটি মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ করেননি।

এ ছাড়া খাতায় দুই পরীক্ষকের মূল্যায়নে এতটাই ফারাক হয়েছে যে তৃতীয় পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন করাতে হয়েছে। দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে পিএসসি তৃতীয় পরীক্ষক না নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দুই পরীক্ষকের মূল্যায়নে আকাশ-পাতাল ফারাক হলে সেটি সম্ভব নয়। এ ছাড়া দুই মাসের মধ্য খাতা দেখার শর্ত থাকলেও অনেক পরীক্ষক ছয় মাস সময় নিয়েছেন।

পিএসসি কোনোভাবেই সময়সূচি রক্ষা করতে পারছে না। ফল প্রকাশে বিলম্বে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চাকরিপ্রার্থীদের আরেকটু ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তাঁরা আর কত ধৈর্য ধরবেন?

সব মিলিয়ে বিসিএস পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে হযবরল অবস্থা চলছে। পিএসসির খাতা দেখা কোনো শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এটি পুরোপুরি স্বেচ্ছামূলক এবং এর বিনিময়ে তাঁরা সম্মানীও পেয়ে থাকেন। আমরা মনে করি, যাঁরা সময়মতো যথাযথভাবে খাতা দেখার কাজ শেষ করতে পারবেন না, তাঁদের এ দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়।

বেসরকারি চাকরির বাজার মন্দা বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়া তরুণেরা বেশি মাত্রায় বিসিএসের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। অনেক চাকরিপ্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হলে যে তাঁদের ওপর আর্থিক ও মানসিক চাপ বাড়ে, সেই উপলব্ধিও কি পরীক্ষকেরা হারিয়ে ফেলেছেন?

আমরা আশা করব, পিএসসি অবিলম্বে ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের ব্যবস্থা করবে। সেই সঙ্গে খাতা মূল্যায়নের পরীক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হবে।

যাঁরা খাতা মূল্যায়নে অনাগ্রহী ও আন্তরিক নন, তাঁদের জোর করে না গছিয়ে আগ্রহী শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিলে অধিক যোগ্য ও দায়িত্বশীল পরীক্ষক পাওয়া মোটেই অসম্ভব নয়।