Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

দুই ছাত্রনেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হোক

৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক নারী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় যখন ক্যাম্পাস তোলপাড়, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

উল্লিখিত ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বহিষ্কার করা হবে, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট শেষ হওয়ার পরও সেখানে জবরদস্তিভাবে বসবাস করছেন। তারা কিছু অছাত্রকে বহিষ্কার করতে পারলেও রাজনৈতিক ব্লকের কাউকে বের করতে পারেনি, ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে সেখানে যাঁরা ‘স্থায়ী বাসিন্দা’ হয়ে গেছেন।

ক্যাম্পাসে ধর্ষণের বিচার ও অছাত্রদের হল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে  বাম ছাত্রসংগঠনগুলো লাগাতার আন্দোলন করে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ছাত্র ইউনিয়ন কলাভবনের দেয়ালে ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদি’ শিরোনামে একটি গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র আঁকে। সেখানে এর আগে বঙ্গবন্ধুর একটি গ্রাফিতি ছিল। এরপরই কয়েকটি ঘটনা দ্রুত ঘটতে দেখা গেল।

বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ফেলার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে তাঁদের অনশন ভঙ্গ, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অমর্ত্য রায় ও  সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমন এক ব্যক্তিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল, যিনি যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন এবং শাস্তি হিসেবে যাঁর পদাবনতি ঘটেছিল।

বহিষ্কৃত ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কলা ও মানবিক অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়ালচিত্র মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচারবিরোধী গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। এ ধরনের দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতি স্থায়ী কিছু নয়। সময়ের ব্যবধানে বদলে যায়। এক দেয়ালচিত্রের ওপর অন্য চিত্র আঁকা হয়। যে দেয়াল থেকে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে ২০১৯ সালের সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে নিয়ে একটি গ্রাফিতি ছিল। এর পাশেই আরেকটি দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি বড় গ্রাফিতি এখনো শোভা পাচ্ছে। তাই বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার জন্য নতুন গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে বলে যে অভিযোগ ছাত্রলীগ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করেছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। একটি গ্রাফিতির স্থলে আরেকটি গ্রাফিতি আঁকার জন্য দুই শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত কেবল অন্যায় নয়, অমানবিকও।

জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন বা অন্য ছাত্রসংগঠনের গ্রাফিতি মুছে ছাত্রলীগের নতুন গ্রাফিতি করার দৃষ্টান্ত আছে। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে ধর্ষণসহ নানা অপকর্ম বন্ধ করতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে অতি তৎপরতা দেখিয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে নিয়মিত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, সাবেক ছাত্রনেতা, বিশিষ্ট নাগরিকেরাও তাঁদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

তাঁদের সঙ্গে একমত হয়ে আমরাও বলতে চাই, ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতা অমর্ত্য রায় ও অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হোক। সামান্য অজুহাতে দুই শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ নয়। তঁারা যাতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হোক।