Thank you for trying Sticky AMP!!

বিচারের বাণী যেখানে নীরবে নিভৃতে কাঁদে

২০১৮ সালের ৮ মার্চ প্রথম আলোর অনুসন্ধানে ঢাকা জেলার পাঁচটি ট্রাইব্যুনালের ১৫ বছরের ৭ হাজার ৮৬৪টি মামলার বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছিল, ৩ শতাংশ মামলায় আসামিরা শাস্তি পেয়েছেন এবং ৯৭ শতাংশ মামলায় শাস্তির বাইরেই থেকে গেছেন।

ছয় বছর পর নারী নির্যাতন মামলার চিত্র কি ভিন্ন কিছু? ২৫ এপ্রিলের প্রতিবেদনে সারা দেশের নারী নির্যাতন ও মামলার বিচারচিত্র উঠে এসেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০২৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হওয়া মামলার সংখ্যা ২০ হাজারের মতো, এর মধ্যে থানায় করা মামলার সংখ্যা ১৮ হাজার ৯৪১। 

এর বাইরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম (চতুর্থ পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকেও নারী নির্যাতনের কিছু চিত্র পাওয়া যায়। ওসিসির তথ্য বলছে, গত ২৩ বছরে সেখান থেকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন এবং দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় ৬২ হাজারের বেশি নারী ও শিশু সহায়তা পেয়েছে। মামলা হয়েছে মাত্র ১৯ হাজার ৪৪১টি। এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে রায় হয়েছে এবং সাজা কার্যকর হয়েছে ১ শতাংশের কম। 

এর অর্থ সব নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয় না। অনেক সময় সামাজিক কারণে মামলা করা হয় না। আবার মামলা করলেই যে প্রতিকার পাওয়া যাবে, সে রকম ভরসাও নেই। সব মিলিয়ে নির্যাতনের শিকার নারী ও তাদের পরিবারগুলোকে চরম অসহায়ত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। 

৯৯টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৮টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চলা মামলার সংখ্যা ৩৪ হাজার। নারী নির্যাতনের মামলাগুলোর যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেই উদ্দেশ্যেই আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। তারপরও মামলাগুলো কেন বছরের পর বছর ঝুলে থাকে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীনের মতে, তিনটি কারণে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া প্রলম্বিত হয়। প্রথমত, ভুক্তভোগী মামলা করার পর মেডিকেল সনদ, ডিএনএ প্রতিবেদন (ধর্ষণের মামলায় আবশ্যক) পেতে দেরি হয়। ফলে তদন্ত ও অভিযোগপত্র গঠনে দেরি হয়। দ্বিতীয়ত, বিচার শুরুর পর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় সাক্ষী হাজির করা। তৃতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটররা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়ে থাকেন। 

প্রথম আলোতে প্রকাশিত ২০০৮ সালের ৬ জুলাই সংঘটিত ফাহমিদা হত্যা মামলায় দেখা যায়, ঘটনার ৬ বছর পর ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ঢাকা জেলা দায়রা জজ আদালত মূল অভিযুক্ত তোজাম্মেল হোসেনসহ দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপরও ১০ বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। ইতিমধ্যে দু‌ই আসামি জামিন নিয়ে জেলখানার বাইরে আছেন। নারী নির্যাতনের এ রকম বহু মামলা বছরের পর বছর নিষ্পত্তির অপেক্ষা থাকে। 

অস্বীকার করা যাবে না যে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে অনেক সময় মামলার তথ্যপ্রমাণ হারিয়ে যায়। বিবাদী পক্ষ নানাভাবে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে। বিশেষ করে বাদীপক্ষ আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলে তাদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হয়। কিন্তু রাষ্ট্র ভুক্তভোগীদের কতটা সহায়তা করে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। 

অপরাধীরা যদি শাস্তিই না পায়, তাহলে নারী নির্যাতন রহিত হবে কী করে?