Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

ভোগান্তি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

৬ অক্টোবর পালিত হলো জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করি, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করি।’ কিন্তু সেই অধিকার নিশ্চিত করতে যে মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তার কিছু উদাহরণ উঠে এসেছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে।

প্রথম দিকে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও হালে মানুষের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের বিষয়ে আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো তঁারা সেই সেবাটা যথাসময়ে পাচ্ছেন না। জন্মনিবন্ধন করাতে এসে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। কখনো তাঁদের বলে দেওয়া হয় ‘সার্ভার ডাউন’, কখনো দেখা যায় সার্ভার কাজ করছে না।

ঢাকায় একজন অভিভাবক জানান, তিনি এক মাস ধরে চেষ্টা করেও আবেদন করতে পারেননি। সকাল-সন্ধ্যা-রাত সব বেলাতেই চেষ্টা করে দেখেছেন, নির্দিষ্ট সাইটে কাজ করতে পারেননি। ঢাকার বাইরের আরেক অভিভাবক বলেছেন, তিনি দুই মাস ধরে চেষ্টা করেও সফল হননি।

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল ইসলামের দাবি, সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই। নাগরিকেরা ঠিকমতো আবেদন না করতে পারা ও দক্ষ লোক না থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছে। এভাবে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে ব্যর্থতা ঢাকা যায় না। সেবাপ্রার্থী ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সার্ভার কাজ করছে না। আর রেজিস্ট্রার মহোদয় বলে দিলেন সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই।

সরকার যেহেতু জন্মনিবন্ধনের কাজটি ডিজিটাল মাধ্যমে করছে, সেহেতু এর সমস্যাগুলোও তাদের দেখতে হবে। আগে সরাসরি জন্মনিবন্ধনের কাজ হতো। ২০১০ সাল থেকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ অনলাইনে হচ্ছে। দিনে গড়ে ২০ হাজার জন্মনিবন্ধন হয়। মৃত্যুনিবন্ধন অনেক কম হয়। নতুন বছরে স্কুলে ভর্তির জন্য এখন থেকে নতুন জন্মনিবন্ধনের চাপ শুরু হবে। দিনে গড়ে ৩০ হাজারের বেশি আবেদন হতে পারে। তার মানে সমস্যার সমাধান করা না গেলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সার্ভারের ধারণক্ষমতা কম থাকলে তা বাড়াতে হবে, সার্ভারের কোডে কোনো বাগ বা ত্রুটি থাকলে দ্রুত সেটি খুঁজে বের করে ঠিক করতে হবে এবং সার্ভারটিকে ব্যবহারবান্ধব করতে হবে। বাস্তবতা হলো প্রতিটি কাউন্সিলর অফিসে সার্ভার দেওয়া হলেও তার ধারণক্ষমতা চাহিদার তুলনায় কম। 

সার্ভারের ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে কি না, জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, ঠিকভাবে কাজ করার জন্য সার্ভারে যা যা করা প্রয়োজন, সবকিছুই করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে নিবন্ধন নেওয়া লাখ লাখ ব্যক্তির তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেলে অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য ব্যক্তির নিজে আবেদন করার সুযোগ আগস্ট মাসজুড়ে বন্ধ থাকে। এই অদক্ষতা ও অব্যবস্থার দায় কাকে দেবে নিবন্ধন কার্যালয়? 

সরকারের অন্যান্য দপ্তরের মতো জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ও সমস্যা অস্বীকারের যে নীতি নিয়েছে, সেটা হঠকারী বলে মনে করি। সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে হলে আগে সমস্যাটি স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশিক্ষিত লোকবল না থাকলে দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চাহিদার চেয়ে কম ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার থাকলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার সরবরাহ করতে হবে। সেই সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিও করতে হবে আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে। অন্যথায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করতে আসা নাগরিকদের হয়রানি ও ভোগান্তি দূর হবে না।