Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

মানিকগঞ্জ ও জাহাঙ্গীরনগরে লজ্জাজনক কাজ

একটি দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকতে হয়। বাংলাদেশে তা ১৪ শতাংশের সামান্য বেশি। দেশের বনভূমি যেভাবে কমে যাচ্ছে, তাতে আমাদের শঙ্কিত হতে হয়। দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বনভূমি ও গাছের বড় সম্ভার থাকলেও তা কোনোভাবেই ধরে রাখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ করেও পরিবেশবিধ্বংসী কাজ ঠেকানো যাচ্ছে না। রাতের আঁধারে বনে আগুন দেওয়া ও গাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটছে।

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিদ্যালয়গুলোও রেহাই পাচ্ছে না। শহরাঞ্চলে অনেক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠই নেই, সেখানে গ্রামাঞ্চলের অনেক বিদ্যালয় থাকে খেলার মাঠ, পুকুর ও গাছগাছালিতে ভরা।

সেসব বিদ্যালয়ের মাঠ, পুকুরও এখন দখল হয়ে যাচ্ছে। গাছ নিধনও করা হচ্ছে। আড়াই মাস আগে পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে মাঠের চারপাশে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন দুর্লভ ঔষধি গাছের ৮৫টি চারা রোপণ করেছিলেন এক দল তরুণ। গত মঙ্গলবার রাতে সব চারার গোড়া ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা মৃত গাছের চারার সঙ্গে বিভিন্ন লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেন। প্ল্যাকার্ডে লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘অক্সিজেন কি অপরাধ?’, ‘মানুষের সন্তান গাছ হত্যা করতে পারে না’, ‘গাছের প্রতি বর্বরতা কেন?’, ‘সবুজ মাঠে অবুঝ মানুষের প্রবেশ বন্ধ হোক’, ‘গাছের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক’, ‘গাছখুনিদের বিচার চাই’ ইত্যাদি। এমন স্লোগান দিয়ে গাছ কাটার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

গত বুধবার ভোরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সুন্দরবন নামের স্থানে আইবিএর ভবন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ কাটা হয়। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর স্থানটিতে নতুন ভবন করতে গেলে অনেক গাছ কাটতে হবে, সেটি জেনেও সেখানে ভবনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কয়েক মাস আগে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করা হলে তখন এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গাছ কেটেই ভবন করতে হবে—এমন জায়গাতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইবিএ অনড় থাকে।

এ জন্য ভোরের আঁধারেই গাছ কেটে নিতে তারা লজ্জিত বোধ করে না। উপাচার্যের দাবি, কারা গাছ কেটেছে, এ বিষয়ে তিনি জানেন না। তাঁর অনুমতিও নেওয়া হয়নি। তাঁর দাবি, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় তিনি গাছ কেটে আইবিএকে ভবন করতে নিষেধ করেছিলেন। এখন তাঁর নিষেধাজ্ঞা না মেনে এ গাছ কাটার ঘটনা ঘটল, এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন, তা হলো দেখার বিষয়।

এভাবে বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা তৈরি হবে, সেখানে এভাবে গাছ নিধন চলছে। এর কোনো শেষ হবে না?