Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা হোক

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে করা দুদকের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি পি কে হালদারকে ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা জরিমানা এবং তাঁর প্রায় ৬৪ একর জমি, ১১টি গাড়ি ও ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

আদালত পি কে হালদারের ১৩ সহযোগীকেও ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে মাত্র চারজন কারাগারে আছেন, পি কে হালদারসহ বাকিরা পলাতক।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। টাকা আর ফেরত না আসায় প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ২০২০ সালের শুরুতে পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা জানাজানি হওয়ার আগেই তিনি দেশ ত্যাগ করেন।

পি কে হালদার প্রথমে যান কানাডা। পরে সেখান থেকে ভারতে আসেন। গত বছরের মে মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তিনি এখন ভারতের কারাগারে আছেন। তাঁকে হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকার দিল্লিকে অনুরোধ জানালেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

বিএনপি সরকারের আমলে পাচার হওয়া কিছু অর্থ ফিরিয়ে বর্তমান সরকার যে কৃতিত্ব দাবি করেছে, সেটা যথার্থই ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে অর্থ পাচার রোধ কিংবা বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকারের পুরো কার্যক্রমই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগেও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি তারা।

এই প্রেক্ষাপটে পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের বিচার অর্থ পাচার রোধে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এখন সরকারের উচিত হবে সহযোগীদেরসহ তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে এর আগে অনেক অপরাধীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাহলে পি কে হালদারকে আনা যাবে না কেন? নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধেও পশ্চিমবঙ্গের আদালতে মামলা ছিল।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে অর্থ পাচারকারীদের দেশ ও জাতির শত্রু আখ্যায়িত করে বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে ও দেশের চলমান উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সরকার আদালতের এই সতর্কবাণী ও আহ্বান কতটা আমলে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।

পি কে হালদারের মামলায় একটি বড় ব্যবসায়ী কোম্পানির নাম এসেছে, যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পি কে হালদারের মতো ব্যক্তিরা দানবে পরিণত হয়েছে। নাম এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সাবেক কর্মকর্তারও।

পি কে হালদারকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। অর্থ পাচার রোধে কেবল বাগাড়ম্বর নয়, সরকারের শক্ত পদক্ষেপই দেখতে চায় দেশবাসী।